নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ মন্তব্য করা হয়।
সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘আপনারা প্রধান বিচারপতি ও আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা কি কিছুই বলতে পারবো না? আমরা কি আদালতে বসে মন্তব্য করতে পারবো না?’
‘কিছু কিছু মন্ত্রী এজলাসে বসে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করেন।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন,‘দুই দিক থেকে বক্তব্য আসে। বক্তব্য মিডিয়া লুফে নেয়’।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন এ কথা বলছেন? বিচারে আমরা রাজনৈতিক মন্তব্য দেই না। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বক্তব্য দেই। বিচার বিভাগে যখন যে ইস্যু চলে আসে। যেমন, আজকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্পর্কে। না বললে কি থাকলো? মাসদার হোসেন মামলা। আমরা রাজনৈতিক কথা বলছি না’।
এ সময় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, ‘শৃঙ্খলা বিধির খসড়ায় গেজেট প্রকাশের বিষয়টি আমরা সুপ্রিম কোর্টের কথা অনুসারে বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা সেখানে সরকারের কথা বলেছেন’।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক কথা বলছি না। কিছু কিছু মন্ত্রী…। মি. অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনারা বিচারপতিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। পত্রিকায় এসেছে, একজন, একজন বলেছেন। কোর্ট প্রসিডিংসে, আদালতের কার্যক্রমে যা হয়, তা নিয়ে সংসদ ও পাবলিকলি কথা বলার সুযোগ নেই’।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘১১৬ অনুচ্ছেদ ও ১১৬ অনুচ্ছেদের ক এর ব্যাখ্যা দিয়ে মাসদার হোসেন মামলার রায় হয়েছে। এখন যদি আপনার কাছ থেকে ব্যাখ্যা শুনতে হয়, তাহলে দুঃখজনক’।
সোমবার (৩১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তারা (বিচারপতিরা) মাসদার হোসেন মামলায় ডিসিপ্লিনারি রুলসের কথা বলেছেন। কেউ কিন্তু ডিসিপ্লিনারি রুলস করেননি। আমি আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরে এ রুলসটা করি। যেহেতু ১০৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘হাইকোর্ট বিভাগের অধঃস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর ওই বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকবে, যেটি হাইকোর্ট, নট আপিল বিভাগ ……। তাদেরকে জানানোর জন্য এটি (রুলস) তাদের কাছে পাঠিয়ে ছিলাম’।
‘তারা সংশোধন করে যেটা দিয়েছিলেন, সেখানে দেখা গেছে, আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে, ১১৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা, সেটি তারা নিয়ে নিতে চান। আমি কি করে সেটি দেই?। আপনারা আমাকে রায় দিয়ে দেন, বলেন?। আমি তো দিতে পারি না’।
আনিসুল হক বলেন, ‘আমি বললাম, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আসুন, শেষ করে দেই। আমি একটি খসড়া পাঠিয়েছি। আপনারা সংশোধন করে দিয়েছেন। আমরা সেটির ওপরে সেটুকুই হাত লাগিয়েছি- যেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ১১৬ অনুচ্ছেদ ( বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে) মতে, সেটি আমি শুধু বলেছি, না, এটি দেওয়া যাবে না। ওটি ফেরত পাঠিয়েছেন’।
‘আমি তো এসে তাকে (প্রধান বিচারপতি) দিয়েছি। আমিতো এমন নয় যে, পিয়ন বা আমার সচিবকে দিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি এসে তাকে দিয়েছি। বলেছি, আপনি পড়েন, আপনি দেখেন। তার পরে যদি কোনো বক্তব্য থাকে, আমাকে জানান। তারপরেও আলোচনা করবো’।
‘তিনি এজলাসে উঠে বলেন, যে হাইকোর্টটা তাহলে উঠিয়ে দেন। হাইকোর্টতো বঙ্গবন্ধু করে দিয়ে গেছেন। আমরা কি করে উঠিয়ে দেবো? তাহলে এ কথা কি অপ্রাসঙ্গিক না? । তিনি প্রধান বিচারপতি। আমার তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান আছে। আমি সেই সম্মান ও অধিকার রেখে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে বলতে চাই, আমিতো হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট ওঠানোর কথা বলিনি’।
‘ডিসিপ্লিনারি রুলস দিয়ে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট ওঠে না। আপনার এজলাসে বসে এগুলো তো বলার তো দরকার হয় না। আলাপ-আলোচনা তো আমি করবোই। আমি কালকে যশোরে ছিলাম। তার কথা শুনে আমি ফোন করে বলেছি, আমি আসছি, বৃহস্পতিবারে বসবো। আমাদের সদিচ্ছা আছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** ‘রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা, সেটা তারা নিয়ে যেতে চায়’