মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) সকালে প্রকাশিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ওই সব মন্তব্য বাদ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আনা সংশোধনীটি বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়টি ৭৯৯ পৃষ্ঠার।
আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানির সময় গত ০৯ মে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘আমরা আদালতে দাখিল করা আবেদনে বলেছি, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে হাইকোর্ট বিভাগ একটি জায়গায় বলেছেন, সংসদ সদস্যদের মধ্যে একটি বিরাট অংশের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। এখন সংসদ সদস্যদের মধ্যে কারা কারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এ তালিকা চাওয়া হোক‘।
‘আদালত জবাবে বলেছেন, এগুলো আমরা শুনানির সময় বা রায়ের সময় দেখবো’।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে যে-‘আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অধিকাংশ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের নজির (রেকর্ড) ও দেওয়ানি মামলাও রয়েছে। ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে তারাই কার্যত উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রক (বস্) হিসেবে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন মতে, সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী। আইন প্রণয়নে সংসদের বিতর্কে এসব সংসদ সদস্যদের আগ্রহ কম’।
‘বর্তমান সময়ে তাদের করা বেশিরভাগ আইন নিম্নমানের ও ত্রুটিপূর্ণ। তারাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবেন। সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব নয় একজন বিচারকের অসদাচরণ ও অযোগ্যতার বিচার করা’।
রায়ে বলা হয়, ‘হাইকোর্টের দেওয়া এসব অভিমত অযৌক্তিক। এটি আমরা অনুমোদন করতে পারি না। আদালত সংসদ সদস্যদের নিয়ে এ জাতীয় মন্তব্য করতে পারেন না। জাতীয় সংসদ ও আদালতের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক থাকা উচিত। একইভাবে আদালতের কার্যক্রম নিয়ে সংসদেরও এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। সংসদ ও বিচার বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত। এ মন্তব্যগুলো বাদ দেওয়া হলো’।
গত ০৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
ফলে মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আর টিকলো না। এখন আগের পদ্ধতিতে সুপ্রিম কোর্ট জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক অপসারণ হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৭
ইএস/এএসআর