আট সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক, লংগদু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে কমিশন গঠনের অগ্রগতি জানিয়ে আগামী ০৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতেও বলেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার (২১ আগস্ট) এ রুল জারি করেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রিট আবেদনটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিখিলেশ চাকমা নিকোলাস। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
গত ১২ জুন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন চেয়ে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন নিখিলেশ চাকমা নিকোলাস। আগুন দেওয়ার ঘটনায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, আদিবাসীদের রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে কি-না এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না- নোটিশে তাও জানতে চেয়েছিলেন তিনি।
নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন এ আইনজীবী। পরে জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
গত ০১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকায় যুবলীগের লংগদু সদর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়নের মরদেহ পাওয়া যায়।
০২ জুন সকালে ময়না তদন্তের পর নয়নের মরদেহ লংগদু উপজেলা সদরে নেওয়ার পর তা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এলাকাবাসী।
এক পর্যায়ে তিনটিলা পাড়া, বাত্যাপাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ মানিকজুড় এবং বড়াদম এলাকায় পাহাড়িদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা আগুনে পুড়ে নিহত হন বলে দাবি করেন পাহাড়িরা।
বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ওই রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে লংগদু থানায় একটি এবং ০৯ জুন পাহাড়িদের পক্ষ থেকে কিশোর কুমার চাকমা একটি মামলা করেন।
নয়ন হত্যার ঘটনায় গত ১০ জুন দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- লংগদুর রাঙ্গিপাড়ার জুনেল চাকমা (১৭) ও খাগড়াছড়ির বাবুছড়ার রুনেল চাকমা (৩২)। পরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মাইনি নদী থেকে নয়নের মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়।
রিট ও নোটিশে নিখিলেশ চাকমা বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের মারফতে জানতে পেরেছি, গত ০১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত মোটরসাইলেক চালক ও যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের মরদেহ পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের পর তার মরদেহ লংগদুতে নিয়ে আসা হয়’।
‘পরে ০২ জুন লংগদু সদরে থানার ওসিসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তারা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে আদিবাসী নেতারা যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে এড়াতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে পুলিশকে অবহিত করেন। কিন্তু পুলিশসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কোনো ধরনের উদ্বিগ্ন না হতে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে সেটেলাররা ৩০০ বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেন। আগুন দেওয়ার আগে লুটপাটও চালান এবং ৭০ বছরের বৃদ্ধাও আগুনে নিহত হন’।
নোটিশে বলা হয়, ‘ঘটনাটি ফেসবুকেও প্রচার করা হয়। সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন এক কাপড়ে স্কুল, মন্দির ও গভীর জঙ্গলে নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন। এখন তাদের কাছে ঘর-বাড়ি বানানোর মতো কোনো টাকা-পয়সা নেই’।
আইনজীবী নিকোলাস বলেন, ‘আমার মতে, স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এটি ঘটেছে। তারা পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এটি ঘটতোনা। আগুন দেওয়ার ঘটনায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, আদিবাসীদের রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে কি-না এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না- তা নিরুপণ করতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
ইএস/এএসআর