তার মতে, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিদেশে যাওয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শুধু রুটিন কাজগুলো করবেন, অন্য কিছু করবেন না বলে যে কথাটি বলে গেছেন, সেটি ঠিক নয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিও কিন্তু সাংবিধানিক পদেরই, ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া লিখিত বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া বক্তব্যে যাবতীয় বিভ্রান্তির নিরসন ঘটেছে, সবকিছু পরিষ্কার হয়েছে’।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংকালে এসব বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এর আগে দুপুরে এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন বিচারপতি সিনহা। রাত ০৯টা ৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বিবৃতিটি দিয়ে যান।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘এ ধরনের রেওয়াজ নেই’।
এ প্র্রসঙ্গে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এটিতো যৌক্তিক কথা হলো না যে, প্রধান বিচারপতি যদি বাইরে থাকেন একমাসের জন্য বা ১৫ দিনের জন্য, তাহলে যিনি প্রধান বিচারপতির কার্যভার পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারবেন না বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না’।
আর লিখিত বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন, সেটি বিভ্রান্তিমূলক’।
‘দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার সম্পর্কে যে সংশয়, সেই সংশয়ের অবসান সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতির মধ্য দিয়ে অবসান হলো’ বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি আসলে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পক্ষেই করা হয়েছে এবং স্বাক্ষর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। এখানে এ বিবৃতির ভেতরে আপনারা নিশ্চয়ই পেয়েছেন বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত। আমি মনে করি, এজন্য বিবৃতিটি দেওয়ার খুব প্রয়োজন ছিলো’।
‘বিদেশ যাত্রার প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতি যে নাটকীয়তার সৃষ্টি করেছেন এবং লিখিত বিবৃতি সাংবাদিকদের দিয়ে গেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে অন্ততপক্ষে সত্যিকার কতগুলো তথ্য জানানো প্রয়োজন ছিলো বলে আমি মনে করি। সেগুলো সুপ্রিম কোর্ট এখানে বলেছেন স্পষ্টভাবে। শেষ প্যারায় বলেছেন, প্রধান বিচারপতি পদটি একটি প্রতিষ্ঠান এবং সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে এর আগে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে কোনো রকম বিবৃতি দেওয়া হয়নি’।
তিনি বলেন, ‘কাজেই প্রধান বিচারপতির বিবৃতির পর যদি সুপ্রিম কোর্ট বসে থাকতেন, তাহলে দেশবাসী বিভ্রান্তিতে পড়ে যেতেন। দেশবাসীর কাছে সমস্ত ঘটনাগুলো সুস্পষ্ট করতেই বিবৃতিটির প্রয়োজন ছিলো বলে আমি মনে করি’।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘বিচারপতি সিনহা তার চিঠিতে বলেছেন, অসুস্থতার কথা। আবার তিনি যাওয়ার সময় যদি বলেন, আমি সুস্থ, যেদিন যাচ্ছেন সেটা তো সেদিনকার কথা। এখানে সুস্থতা-অসুস্থতার প্রশ্ন বড় নয়। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, স্বেচ্ছায় বিদেশে যাচ্ছেন, কেউ তাকে জোর করে পাঠাচ্ছেন না’।
‘তারপরে আর এ বিষয়ে কোনো তর্ক-বিতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি না। যারা প্রধান বিচারপতির এই ছুটির বিষয়ে নিয়ে, এই কার্যভার নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয়, সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এ বিষয়ে তাদেরও আর কিছু বলা উচিত নয় বলে আমি মনে করি’।
‘স্পষ্ট কথা হলো, এতোদিন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল বলে আসছিলো যে, প্রধান বিচারপতিকে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা তাকে হেনস্থা করছে বা তাকে সরাবার চেষ্টা করছে। এ বিবৃতির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়ে গেলো যে, তাকে সরানোর বা বেঞ্চ না বসার বিষয়ে সরকারের কোনো ভূমিকাই নেই’- মন্তব্য অ্যাটর্নি জেনারেলের।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর