সোমবার (৩০ অক্টোবর) এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
মৃত আব্দুল মজিদ (৮৫) সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রশিদ মিয়াসহ কক্সবাজারের মহেশখালীর ১৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আসামি ছিলেন।
তবে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত তার গত ১৩ জুলাই দাখিল করা আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া জরুরি প্রয়োজন উল্লেখ করে জানান, এ মামলার আসামি আব্দুল মজিদ গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতে মারা গেলেও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে পলাতক দেখিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন এসআই জহিরুল হক। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।
তিনি বলেন, ‘আসামি মারা যাওয়ার দুই মাস পরও বিষয়টি না জেনে পলাতক ও তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে প্রতিবেদন দেন ওই পুলিশ সদস্য। এতে তার গাফিলতিই প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের প্রতিবেদন বিচারিক কাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে’।
তিনি জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল ওই পুলিশ সদস্যকে তলব করে এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার ও থানার ওসিকে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন’।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ানও গত ২৫ মে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন। এরপর আব্দুল মজিদের মৃত্যুর খবরের সত্যতা যাচাই করতে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মহেশখালী থানার ওসির কাছে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেন। পরে অবশ্য গত ১১ জুন মহেশখালী থানার আসামির মৃত্যুর খবরটি সত্য বলে প্রতিবেদন দেন।
পরে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শুরু করে সময়ের আবেদন জানান প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। আগামী ২৬ নভেম্বর অসমাপ্ত শুনানির দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ১৫ মার্চ আব্দুল মজিদসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, ধর্মান্তর ও দেশান্তরকরণের ১৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে ৯৪ জনকে হত্যা, অসংখ্য নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন এবং ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
মজিদ মারা যাওয়ার পর বর্তমানে এ মামলার আসামি ১৭ জন। এর আগে এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে তদন্ত চলাকালে গ্রেফতার হওয়ার পর মৌলভি শামসুদ্দোহা (৮২) অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় তার নামও আসামি তালিকা থেকে বাদ গেছে।
আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. রশিদ মিয়া বিএ (৮৩), সালামত উল্লাহ খান (৭৭), মৌলভি নুরুল ইসলাম (৬১), বাদশা মিয়া (৭৩), ও ওসমান গণি (৬১)। তাদের মধ্যে রশিদ মিয়া বিশেষ শর্তে জামিনে আছেন।
পলাতক অন্য ১২ আসামি হচ্ছেন- মৌলভি জকরিয়া শিকদার (৭৮), অলি আহমদ (৫৮), মো. জালাল উদ্দিন (৬৩), মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাবুল (৬৩), মমতাজ আহম্মদ (৬০), হাবিবুর রহমান (৭০), মৌলভি আমজাদ আলী (৭০), আব্দুল শুক্কুর (৬৫), মৌলভি রমিজ হাসান (৭০), মো. জাকারিয়া (৫৮), মৌলভি জালাল (৭৫) এবং আব্দুল আজিজ (৬৮)।
২০১৫ সালের ০৮ অক্টোবর এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. নূরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১২ মে থেকে ওইদিন পর্যন্ত তদন্ত করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম পার্টির সক্রিয় নেতাকর্মী ছিলেন। এর মধ্যে সালামত উল্লাহ খান মানবতাবিরোধী অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যরা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটনে সার্বিক সহায়তা প্রদান এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেরাও ওই সব অপরাধ করেছেন আসামিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
ইএস/এএসআর