মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন।
এ মামলার প্রসিকিউটর আবুল কালাম বলেন, সোমবার (৩০ অক্টোবর) ফরমাল চার্জ দাখিল করে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার জিন্নত আলীর ছেলে শহীদুল্লাহ্ (৭৫) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দাউদকান্দিতে হত্যা, আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩ জনকে হত্যা, ১৩ জনকে আটক ও নির্যাতন এবং ৫টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসের অভিযোগ।
গত ২১ মার্চ শহীদুল্লাহ্র বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউশন।
তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর থেকে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত তদন্ত করেন জেড এম আলতাফুর রহমান।
প্রসিকিউশনের আবেদনে গত বছরের ০২ আগস্ট ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ্’র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিনই রাত ১টায় আমিরাবাদ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে দাউদকান্দি থানা পুলিশ। পরদিন ০৩ আগস্ট হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
শহীদুল্লাহ্’র বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ
শহীদুল্লাহ্ ১৯৬২ সালে প্রথমে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৬৭ সালে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হয়ে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হন। এরপর ১৯৬৯ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭০ সালে তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পোস্টিং দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ্কে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে তার নিজ এলাকা কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাঠানো হয়। শহিদুলের নেতৃত্বে কুমিল্লা সেনানিবাসের ১৪০/১৫০ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্য নিয়ে সেখানকার স্কুল ও ডাকবাংলোয় সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এরপর ওই এলাকায় অন্যায় আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুন্ঠন, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন শহিদুল্লাহ্ ও তার বাহিনী।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ০৭ জুন শহীদুল্লাহ্ পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দি বাজারে হোমিও ওষুধের দোকানে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ডা. হাবিবুর রহমানকে আটক করে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নির্যাতন করেন। পরে দাউদকান্দি ফেরিঘাট সংলগ্ন গোমতি নদীতে নিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ জুন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ২০ জনকে অন্যায় আটক করে নির্যাতন, ৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করেন। আটককৃত ২০ জনের মধ্যে ৫ জনকে ছেড়ে দিয়ে ১৫ জনকে মান্নান ফরাজীর বাড়ির সামনে এনে মান্নান ফরাজীর একটি বড় গরু জবাই করে জবাইকৃত গরুর ২ রান নিয়ে আটককৃত একজনকে ছেড়ে দেন। এরপর আটককৃত ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেওয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে এনে লাইনে দাঁড় করান। লাইন থেকে একজনকে বের করে ৫০/৬০ হাত দূরে গোমতী নদীর কিনারে নিয়ে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ একজনকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদীর কিনারে ফেলে দেন। আটককৃত ১৩ জনকে নিয়ে নৌকাযোগে দাউদকান্দি ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করে মুক্তিযোদ্ধাদের খবরা-খবর দিতে এবং হত্যার ঘটনা কাউকে না জানানোর শর্তে সন্ধ্যার আগে ছেড়ে দেন।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২১ জুলাই শহিদুল্লাহ্ পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ড্রাইভার কালা মিয়াকে আটক ও নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনাদের গাড়িতে তুলে চান্দিনা হাসপাতালের পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
ইএস/এএসআর