রাজধানীর বিমানবন্দর থানার কাওলার সিভিল অ্যাভিয়েশনের স্টাফ কোয়ার্টারের নিজ বাসায় ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট খুন হন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) গাড়িচালক জাহাঙ্গীর। ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর নিহতের কিশোরী মেয়ে এ্যামি জাহান (১৬) ও একমাত্র ছেলে মাশরাফি রাব্বানি (১২) তাদের মা মুক্তা জাহানের (৪২) বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
বুধবার (০১ নভেম্বর) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির এ রায় দেন ঢাকার সাত নম্বর বিশেষ জজ মুন্সি রফিউল আলমের আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক আসামির খালাসের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পিপি ড. মো. মাহবুব আলম ভূঁইয়া মিলন। তারা বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মামলার অভিযোগ আমরা যেভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি, তাতে তিন আসামিরই মৃত্যদণ্ডের রায় হওয়া উচিত ছিল’।
এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানান তারা।
গত ১৯ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে ০১ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
ওইদিন জামিনে থাকা তিন আসামি নিহতের স্ত্রী মুক্তা জাহান, তার পরকীয়া প্রেমিক জসিম ও জসিমের সহযোগী মাহবুবুর রহমানের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়।
বুধবার রায় শোনাতে তিন আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় নিহতের খালাতো ভাই মো. আব্দুল লতিফ বিমানবন্দর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে কারও নাম ছিল না।
তবে প্রাথমিক তদন্তে স্ত্রী মুক্তা জাহান, তার পরকীয়া প্রেমিক জসিম ও মাহবুবুর রহমানের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বকর সিদ্দিক তাদের গ্রেফতার করেন।
পরে আসামিদের মধ্যে মুক্তা জাহান হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে দুই সন্তানকে প্রাইভেট পড়তে পাঠিয়ে তার পরকীয়া প্রেমিক ২৫ বছর বয়সী জসিমকে নিয়ে স্বামীকে হত্যার বর্ণনা দেন তিনি।
তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিদ্দিকুর রহমান।
মামলাটির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর চার্জশিটভুক্ত ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
সাক্ষীদের মধ্যে ছিলেন নিহত জাহাঙ্গীর ও প্রধান আসামি মুক্তা জাহানের ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে এ্যামি জাহান ও ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মাশরাফি রাব্বানি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের তৎকালীন প্রধান ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান, ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৪ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৭
এমআই/এএসআর