ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ক্ষেত্রে এসব চলবে না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৭
‘মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ক্ষেত্রে এসব চলবে না’ মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি)

ঢাকা: ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মন্তব্য করা রায়টির পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের পর আসামিপক্ষের সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ক্ষেত্রে এসব চলবে না’।

মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।  
 
সাভারের এক হত্যা মামলার আপিলের রায়ের সময় ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ বলে মন্তব্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।

ওই রায়টির রিভিউ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে গত রোববার (০৫ নভেম্বর) সাংবাদিকদের জানান আবেদনকারী আতাউর রহমান মৃধার আইনজীবী শিশির মনির।  
 
এ মামলায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে থাকবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরদিন তিনি এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।  
 
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর আগেই আমি বহুবার বলেছি, যারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ক্ষমতায় আছেন, তাদেরকে পেছন থেকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে একটি রাজনৈতিক দল। সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে এবং সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের পক্ষে একজন আইনজীবী স্বাক্ষর করেছেন। যিনি স্বাক্ষর করেছেন, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অনেকগুলো মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন।
 
মাহবুবে আলম বলেন, ‘যে কারণে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে, অর্থাৎ আমৃত্যু কারাবাস, আমৃত্যু সাজা বলতে কি বোঝাবে? এটি কি মৃত্যু পর্যন্ত বোঝাবে না ৩০ বা ২২ বছর পর্যন্ত বোঝাবে? এটির ব্যাখ্যার জন্য তারা রিভিউ আবেদনও করেছেন’।
 
‘আমি যেটি অনুমান করছি, জামায়াত ইসলামি এর পেছনে আছে বলে আমার ধারণা। তার কারণ, তাদের অনেক নেতার আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। এটিকেই কোনো রকমভাবে যদি ব্যাখ্যা তারা পান, তাহলে হয়তো আর তাদের জীবনভর কারাগারে থাকতে হবে না। কিন্তু এ ব্যপারে আমাদের অভিমত হলো, এ সমস্ত ব্যাখ্যাগুলো হলো ফৌজদারি কার্যবিধি আইন বা পেনাল কোডের অধীনে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোতে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো হয়েছে আলাদা আইনে। যে আইনটা সাংবিধানিক প্রটেকশনে প্রণীত। এ আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের সাক্ষ্য আইন বা পেনাল কোডের কোনো রকম বাধ্যবাধকতা নাই। কাজেই এটি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সমিতির কর্মকর্তাদের পেছনে বিভিন্নভাবে কিছু শক্তি আছে। তারা তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে’- বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
 
তিনি বলেন, ‘তারা রিভিউ আবেদন করেছেন, সে বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আদালত যেটি সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই হবে’।
 
‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে কি আমৃত্যু কারাদণ্ড?’- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সেটি আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন, বলে দেবেন। কিন্তু আমার বক্তব্য হলো- মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ক্ষেত্রে এসব চলবে না। আর পেছনে যে সমিতির সভাপতি-সম্পাদক তাদের পক্ষে কেন একজন আইনজীবী স্বাক্ষর করবেন? তিনিতো কোনো কমিটির সদস্য নন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আইনজীবী ছিলেন’।  

‘এটি আপনারা একটু লক্ষ্য করবেন। তিনি কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের অধিকাংশ মামলার আইনজীবী। এ জিনিসটাই দেশবাসীর একটুখানি সচেতন হওয়া দরকার। যুদ্ধাপরাধের দায়ে যারা অভিযুক্ত তাদের সমর্থকরা বা তাদের পক্ষের যে কিছু লোক আছেন, তারা কিন্তু নিশ্চুপ বসে নেই। তারা নানাভাবে এ বিচার এবং দ্বন্দ্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন’।
 
‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমুত্যু কারাদণ্ড কমাতে তাদের এ রিভিউ প্রচেষ্টা?’- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আরেকটি বিষয় হলো, আমরা আদালতে রিভিউ আবেদন করি। এ রিভিউ আবেদন করে বা মামলা দায়ের করে কোনো সংবাদ সম্মেলনের নজির তো এর আগে নেই, দেখিওনি। আইনের ব্যাখ্যা চেয়ে বহু রিভিউ আবেদন আমরা করি এবং অন্যান্য নাগরিকরাও করেন। তার জন্য সংবাদ সম্মেলন করার মতো বিষয় তো এটি নয়। যার স্বাক্ষরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে, তিনি আবার জামায়াতেরই আইনজীবী’।
 
ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত এক মামলার রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ইনকাম ট্যাক্সের বিধানে আছে- কোনো অ্যাকাউন্ট যদি অডিটর দ্বারা অডিটেড হয়, সেটি ইনকাম ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইনকাম ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট থাকার পরও কাগজের অভাবে সেটা গ্রহণ করে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টে কিছু ‍কিছু রায় হয়েছিল সরকারের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ এনবিআরের বিরুদ্ধে’।  

‘সে রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করেছিলাম। সে আপিলের শুনানি হয়েছে, সে আপিলের রায় আমাদের পক্ষে গেছে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে। এ পর্যবেক্ষণে কি আছে সেটি দেখেই বোঝা যাবে- কোন কোন পয়েন্টে হাইকোর্টের রায়কে বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ’।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।