তার মতে, ‘পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ, অন্য বিচারপতিরা যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে না বসতে চান, তাহলে তার অন্য কোনো পথ থাকে না’।
রোববার (১২ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলতে শুধু প্রধান বিচারপতিকে বোঝায় না। প্রধান বিচারপতিসহ সব ক’জন বিচারপতিকে বোঝায়। যেদিন অন্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একত্রে বসে মামলার নিষ্পত্তিতে অনীহা প্রকাশ করলেন এবং রাজি হলেন না, সেদিনই বিষয়টির ফয়সালা হয়ে গেছে। সেদিনই কিন্তু আমি বলেছিলাম, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলাম, ফিরে এসে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া তার জন্য সুদূরপরাহত’।
১১টি অভিযোগের মুখে থাকা ব্যক্তিকে দেশের বাইরে থেকে পদত্যাগের সুযোগ করে দেওয়ার মধ্যে কোনো গাফিলতি আছে কি-না- এমন প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সরকারের কোনো গাফিলতি নেই। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে এবং সবচেয়ে বড় কথা, তিনি প্রধান বিচারপতি। তার বিরুদ্ধে তো সাধারণ আদালতে গিয়ে মামলা করা যায় না। এগুলো রাষ্ট্রপতির গোচরে গেছে, রাষ্ট্রপতি তার অন্য বিচারপতিদের জানিয়েছেন। অন্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে বসতে রাজি হননি। এটিই হলো বাস্তব’।
‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কোনোদিন এ ঘটনা ঘটেনি যে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অথচ, তার সঙ্গে না বসার কারণ দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে এখন যারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নিয়ে নানা রকম বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন এবং নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন, সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় এবং শুধুমাত্র রাজনীতির খাতিরে তারা এগুলো কথা বলছেন’।
পদত্যাগের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে কি-না?- জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতির বিষয়। রাষ্ট্রপতি কি করবেন, তা তিনিই জানেন’।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনো ধরনের সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে কি-না?- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কোনো শূন্যতা নেই। এ বিষয়ে আমাদের আইনন্ত্রী বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি হিসেবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন’।
পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতি হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে যায়, গেজেট প্রকাশ করতে হয়। সেগুলো বড় কথা নয়, সংবিধানে আছে, তিনি স্বহস্তে পদত্যাগের আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে দিলে সেটি কার্যকর হবে’।
বিচারপতি এস কে সিনহার রায়ের ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায় তো তিনি একা দেননি। আমি সে কথাই বারবার বলছি, আমাদের বিচার বিভাগে এককভাবে কোনো বিচারপতি বিচার করেন না, বিশেষ করে আপিল বিভাগে। বিচার যেগুলো করা হয়েছে, অন্যান্য বিচারপতিরাও তার সঙ্গে ছিলেন। সুতরাং, বিচার শেষে যেগুলোর রায় হয়েছে, সেসব রায়ে কোনো প্রভাবই পড়বে না এবং রায়ের কার্যকারিতাও কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হবে না’।
যেসব পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি, সেসব রায়ের কি হবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘রায়টি যদি ঘোষিত হয়ে থাকে, তাহলে তার পক্ষে অন্য একজন স্বাক্ষর করবেন। যেটি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিধান, একজন বিচারপতি যদি একটি মামলা শোনেন, হঠাৎ তিনি যদি পদত্যাগ করেন বা মারা যান, এক্ষেত্রে রুলসই আছে- তার পক্ষে অন্য একজন স্বাক্ষর করবেন’।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রক্রিয়া চলছে, সেটি হবে’।
রিভিউ আবেদনের শুনানিতে আপিল বেঞ্চের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিয়মটি হলো, যে কয়জন বিচারপতি একটি রায় দিয়েছেন, রিভিউ শুনানি করতে হলে ততো সংখ্যক বিচারপতি লাগে বা তার চেয়ে একজন বা দু’জন বেশি লাগে’।
কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিলেন সাতজন বিচারপতি। এখন আপিল বেঞ্চে আছেন পাঁচজন, সেক্ষেত্রে কি হবে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে সম্ভব হবে না, যে পর্যন্ত ওই সংখ্যক বিচারপতি না থাকেন।
অন্য প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অন্য বিচারপতিরা সব মন্তব্য বা রায়ই সংশোধন করতে পারবেন বা পরিবর্তন করতে পারবেন বা বাতিলও করতে পারবেন।
দীর্ঘ একমাস ১০ দিন ছুটির শেষ দিনে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সিঙ্গাপুর থেকে হাইকমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শনিবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১টা নাগাদ পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে পৌঁছে।
আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরে যাওয়ার দুই মাস ২১ দিন আগেই পদত্যাগ করেছেন বিচারপতি সিনহা। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি নিয়োগ পাওয়া এই প্রধান বিচারপতি পৌনে তিন বছর দায়িত্বে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭
ইএস/এএসআর