ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘এটা সুপ্রিম কোর্টের মতামত নয়’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
‘এটা সুপ্রিম কোর্টের মতামত নয়’

ঢাকা: ‘আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না’ -দুদকে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এমন চিঠির মতামত সুপ্রিম কোর্টের নয় বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার রায় দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

সাতটি পর্যবেক্ষণ হলো-এক. আপিল বিভাগের প্রশাসনিক ক্ষমতায় আলোচিত চিঠি দেওয়া যথাযথ হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে জারি করা রুলের বিচার চলতে পারে।

দুই. এ চিঠি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু অপ্রাসঙ্গিক ও নিজ এখতিয়ার বহির্ভূত যুক্তি গ্রহণ করেছে, যা কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তিন. এ চিঠি আপিল বিভাগ তার প্রশাসনিক ক্ষমতায় দিয়েছে। এটা কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের মতামত হিসেবে বলার সুযোগ নেই। চার. এ চিঠি জনগণের কাছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও ভাবমূর্তিকে খর্ব করেছে। পাঁচ. ওই চিঠি জনগণের মধ্যে বার্তা দিয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে দায়মুক্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর কেউ দায়মুক্তি পেতে পারে না। তবে রাষ্ট্রপতি শুধু তার পদে বহাল থাকাবস্থায় এ দায়মুক্তি পাবেন। ছয়. সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের সাত বছর ধরে অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। সাত. ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাতে অকারণে তাদের মর্যাদাহানি না ঘটে বা হয়রানির শিকার না হন। মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও গৌরব জড়িত।    

রায়ে আদালত বলেন, এটা আপিল বিভাগের প্রশাসনিক চিঠি। সুপ্রিম কোর্টের মতামত নয়।

এ রুল শুনানিতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। অ্যামিকাস কিউরি ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও এ এম আমিন উদ্দিন।

রায়ের পর খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করেছেন। পর্যবেক্ষণগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারাংশ হলো-এ চিঠিটাকে কোনোক্রমে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি বলা যাবে না। এটা আপিল বিভাগের একটি অফিসিয়াল চিঠি। এ চিঠি দিয়ে জনমনে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। মনে হবে জজরা আইনের উর্দ্ধে। কেউ আইনের উর্দ্ধে নন, একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া। প্রেসিডেন্ট ওনার কার্যমেয়াদে কাজটা করবেন।

রায়ের ব্যাখ্যায় খুরশীদ আলম খান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আইনের উর্দ্ধে নন। কারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির গন্ধ পায়, দুদক সেটা অনুসন্ধান করতে, তদন্ত করতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আদালত বলেছেন, দুদক সাত বছর ধরে অনুসন্ধান করছেন (বিচারপতি জয়নুলের ব্যাপারে) , এ ব্যাপারে কোর্ট অসন্তুষ্ট। একটা অনুসন্ধান করতে কেন সাত বছর লাগবে? যখন একজন অবসরপ্রাপ্ত জজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে তখন তার ডিগনিটি ও প্রেস্ট্রিজসহ সুপ্রিম কোর্টের প্রেস্ট্রিজ সম্পর্কে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অথবা দুদককে খেয়াল রাখতে হবে যাতে জনমনে বিভ্রান্তি না ঘটে, এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যেন হয়রানির শিকার না হন। ’

তিনি আরো বলেন, রায়ে এটা বুঝলাম যে, চিঠিটা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি হতে পারে। এ চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি। এটাকে কোনো ক্রমেই সুপ্রিম কোর্টের চিঠি বলা যাবে না। আমরা বলতে পারি ওই চিঠি অবৈধ।

জয়নুল আবেদীনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, হাইকোর্টের এ রায় পজিটিভ।  

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বদিউজ্জামান তফাদার সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত গত ২৮ মার্চ দুদককে পাঠানো ওই চিঠিটি নজরে আনলে গত ৯ অক্টোবর এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে রুল শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে তিন জনকে নিয়োগ দেন।

দুদকে জয়নুল আবেদীনের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সুষ্ঠু যাচাই ও অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে তার চাকরির (বিচারপতি হিসেবে) মেয়াদ, সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র (যোগদানপত্র, অবসর গ্রহণের তারিখ সংবলিত কাগজপত্র) ও চাকরি সূত্রে বিভিন্ন (বেতন, ভাতা, অবসর সুবিধা ইত্যাদি) খাতে গৃহীত অর্থের বিবরণী (অর্থবছর হিসেবে) চেয়ে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেয় দুদক।

জবাবে ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট দুদককে ওই চিঠি পাঠান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৭
ইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।