বুধবার (২২ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
১ নম্বর অভিযোগে আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ২ ও ৩ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর মামলার শেষ ধাপ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একই মামলার ছয় আসামির অন্য পাঁচজন হলেন- মো. রুহুল আমিন মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর হায়দার আলী ও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
গ্রেফতার লতিফের পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজাউল আলম।
রায়ের পর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ঘোড়ামারা আজিজ রাজাকার কমান্ডার ছিলেন, এটি রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। যে অপরাধ হয়েছে সবগুলো অপরাধে ওনার প্রত্যক্ষভাবে অর্থাৎ তিনি নটোরিয়াস কমান্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এর মানে হচ্ছে কুখ্যাত বা ভয়ানক কমান্ডার। এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঘটনা কেউ বেশি কেউ কম করেছেন। কিন্তু যৌথভাবে পরিকল্পনা করে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। এ কারণে শাস্তি কোনোভাবে কমবে না।
তিনি বলেন, ঘোড়ামারা আজিজ মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন। তিনি তার এলাকার অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তেমনি ২০১৩ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরতাল-অবরোধের সময় পুলিশ ক্যাম্পে আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। তাকে ফাঁসির সাজা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন এতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, পলাতক আসামিরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আত্মসমর্পণ করে আপিল বিভাগে আপিল করবেন। সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনায় তারা খালাস পেতে পারেন।
খন্দকার রেজাউল আলম বলেন, আসামি লতিফ মনে করেন তিনি ন্যায়বিচার পাননি। এজন্য আপিল করবেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছিলো সেগুলো হলো-
এক. ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার সময় আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনাবাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গণেশ চন্দ্র বর্মনের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে ও বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।
দুই. একইদিন বিকেল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠের হাট ব্রিজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠের হাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিনদিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকেলে তাকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়।
তিন. ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর আসামিরা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে আটক করে। তাদের তিনদিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং মরদেহ মাটি চাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মরণে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭/আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা/আপডেট: ১৩৫৮
ইএস/জেডএস