কক্সবাজার এবার সিসিটিভির আওতায় আসছে বাংলানিউজকে একথা জানালেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একে. এম ইকবাল হোসাইন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি ছবি এক হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি রণজিৎ বড়ুযা বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১২টায় কক্সবাজার জেলা পোস্ট অফিসের সামনে থেকে এক যুবকের মোটর সাইকেল চুরি যায়। এর কিছুক্ষণ পরই সদর থানায় অভিযোগ করেন সেই যুবক। অভিযোগ পেয়ে সদর থানার পুলিশ মোটর সাইকেল চোরকে চিহ্নিত করতে ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনের সিসি টিভি’র ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজ থেকেই মোটর সাইকেল চোরকে চিহ্নিত করে পুলিশ। সেদিন রাতেই মোটর সাইকেল চুরির দায়ে ফুটেজে শনাক্ত হওয়া দুই মোটর সাইকেল চোরকে আটক করা হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, ১০/১৫ দিন আগে সমুদ্র-শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় এক বিদেশি পর্যটক তার ব্যাগ হারিয়ে ফেলেন। ব্যাগে তার পাসপোর্ট, ক্যামেরা, টাকা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ছিল। পরে তিনি জেলা পুলিশের সহযোগিতা চান। আমরা তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে হোটেল মোটেল জোনে কয়েকটি হোটেলে থাকা সিসিটিভি’র ফুটেজ সংগ্রহ করি। সেখান থেকে দেখতে পাই ওই পর্যটক একটি টমটমে(ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) তার ব্যাগটি ফেলে এসেছেন। এরপর আমরা টমটম চালককে চিহ্নিত করে পর্যটকের ব্যাগটি উদ্ধার করি।
শুধু অপরাধীদের ধরতে নয়, সিসিটিভি অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে দাবি করে কক্সবাজার সদর থানার ওসি (অপারেশন ) মাঈন উদ্দিন বলেন, একজন অপরাধীকে আটক করার পর পুলিশের কাজ হয় আদালতে তার অপরাধ প্রমাণ করা। সেক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাক্ষীর অভাবে বা আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পুলিশ সেটি প্রমাণ করতে পারে না। তবে ফুটেজ থাকলে আদালতে অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করা অনেক সহজ হয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সিসিটিভি একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভূমিকা পালন করে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করেছে--এরকম উদাহারণ অহরহ রয়েছে। আধুনিক যুগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সিসিটিভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবিষয়টিকে মাথায় রেখেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র-শহর কক্সবাজারকে সিসিটিভি’র আওতায় পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা পুলিশ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একে.এম ইকবাল হোসাইন জানান, কক্সবাজার পৌরসভা, হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, ব্যাংক বীমার কর্মকর্তাগণ ও কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাসের সার্বিক সহযোগিতায় পর্যটন শহর কক্সবাজারকে সিসিটিভির আওতায় আনা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কলাতলী থেকে শুরু করে বার্মিজ মার্কেট পর্যন্ত ১৫০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এই সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থাকবে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে। এর জন্য একটি একতলা ভবন করে দেবে পৌরসভা।
তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই সিসিটিভি চালু হবে। এই লক্ষ্যে এরই মধ্যে জেলা পুলিশ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কয়েকদফা বৈঠকও করেছে। তারা সবাই জেলা পুলিশকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছেন। তাছাড়া ৪ জন সিভিল আইসিটি এক্সপার্ট সহ ১০ জন পুলিশের একটি টিম ঠিক করা হয়েছে মনিটরিংয়ের জন্য।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, আইসিটি ভবন অর্থাৎ কন্ট্রোল রুম নির্মাণের জন্য ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে। আশা করছি, জানুয়ারি মাসেই এর নির্মাণকাজ শেষ করতে পারব।
এদিকে সিসিটিভি পূর্ণাঙ্গ রুপে চালু হলে অপরাধ প্রবণতা অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে দাবি করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, অপরাধীরা এমনিতেই মানসিকভাবে দুর্বল প্রকৃতির হয়। সমাজ ও আইনকে ফাঁকি দিয়ে তারা সচরাচর অগোচরেই অপরাধ করে। কিন্তু অপরাধীরা যখন জানতে পারবে পুরো শহর সিসিটিভির আওতায় আর এর মনিটরিং করছে জেলা পুলিশ, তখন তারা অপরাধ করার সাহস পাবে না।
তার মতে, সিসিটিভি’র কারণে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অপরাধী অপরাধের অন্ধকার পথ ছেড়ে দেবে।
জেলা পুলিশ সুপার ড. একে.এম ইকবাল হোসাইন বলেন, পর্যটন-শহরকে ছিনতাইমুক্ত ও পর্যটকদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এসবেরই একটি হচ্ছে শহরকে সিসিটিভির আওতায় এনে মনিটরিং করার পদক্ষেপ। আমরা আশা করছি, সব ভবনমালিক তাদের ভবনের সামনের রাস্তায় সিসিটিভি লাগাবেন। তবে এর সংযোগ জেলা পুলিশের মনিটরিং রুমের সাথে থাকবে। সবার সহযোগিতা পেলে দ্রুত এর সুফলও পাবে জনগণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
জেএম