ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জামায়াতের ২৫ প্রার্থী বাতিলের আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
জামায়াতের ২৫ প্রার্থী বাতিলের আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ

ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ‘জামায়াত ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল পূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে’ চারব্যক্তির করা নির্বাচন কমিশনে আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ নির্দেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।

তিনি নিজেই আদেশের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট  করেছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, দলটির সমাজ কল্যাণ সচিব মো. আলী হোসেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. এমদাদুল হক ।

তানিয়া আমীর বলেন, আবেদনকারীরা ইসিতে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।  

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী মহামান্য হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থে রিট মামলা দায়ের করি। উক্ত মোকদ্দমায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ সন্তুষ্ট হয়ে রুল অ্যাবস্যুলিট করেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন। ’

‘ইদানিং বিভিন্ন পত্র বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমি জানতে পারি,  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার জমা দেন যা অত্র ইলেকশন কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয় এবং তাদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়। ’

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ১ আগস্ট এক রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন, যা অদ্যবধি বহাল আছে। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইট থেকে তাদের রাজনৈতিক দলের ২৫ জন প্রার্থীর তথ্য-উপাত্ত এবং তদসংক্রান্তে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট দাখিল পূর্বক আপনার কাছে নিবেদন করছি রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল পূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আপনার সদয় মর্জি হয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রার্থনা করছি। ’ 

তানিয়া আমীর আরও বলেন, আবেদনকারীদের এ আবেদন তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি এ আদেশ দেন।

আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে সোমবারের শুনানিতে তানিয়া আমীর বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ২০০৯ সালে রিট করা হয়। ওই রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধান পরিপন্থী। এই রায় এখনও বহাল রয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই সেহেতু ওই দলের কোনো নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না সেহেতু অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই। এরপরও জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে ইসি হাইকোর্টের রায় ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের বিভিন্ন বিধির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত জামায়তের ২৫ প্রার্থী হলেন- ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ আসনে মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ আসনে ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আসনে আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।

তাদের সবাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী। কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ জোট মনোনীত হলেও তিনি আপেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।  

এছাড়া জোটের বাইরে নির্বাচন করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল, চট্টগ্রাম-১৬ জহিরুল ইসলাম, ও পাবনা-১ আসনে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮/আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।