ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘লিগ্যাল এইড করুণা নয়, আইনগত অধিকার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৯
‘লিগ্যাল এইড করুণা নয়, আইনগত অধিকার’ আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সমাজের সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত ব্যক্তি বিশেষভাবে নারী ও শিশুরা লিগ্যাল এইড থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
 

রোববার (০৫ মে) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা: চলমান প্রক্রিয়া ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
 
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকার একটি সার্বজনীন মৌলিক মানবাধিকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং দরিদ্রবান্ধব ও জনকল্যাণকর বিচার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি হলো লিগ্যাল এইড তথা আইনগত সহায়তা দেওয়া। ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’র যে অমীয় বাণী আমরা বারবার প্রতিধ্বনি করি, আইনগত সহায়তা ব্যতিরেকে তা কখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।  

‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া কোনো দান বা করুণা নয়; এটা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অধিকার, আর রাষ্ট্রের এক অপরিহার্য দায়িত্ব। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণীত হয়। এটি সত্যিই একটি নন্দিত আইন। বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং এর সুফল ক্রমান্বয়ে দেশের সবা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ ফলপ্রসূ কার্যক্রম এরইমধ্যে সবমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। ’

পরিসংখ্যান থেকে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন,  ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ৩,৯৩,৭৯০ জনকে বিভিন্নভাবে লিগ্যাল এইড দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ১৩,৮৩১ জনকে লিগ্যাল এইড দিয়েছেন। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

লিগ্যাল এইড সংক্রান্ত আইন, বিধি ও সার্কুলারগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, লিগ্যাল এইড বিষয়ক আইন-কানুনকে প্রতিটি ল’স্কুলের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ, যেন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ের উপর বিস্তৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে। সরকারি খরচে পরিচালিত মামলাগুলো অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে এবং দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, লিগ্যাল এইড দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির আর্থিক অসচ্ছলতাসহ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মামলার গুণাগুণও বিবেচনা করতে হবে। সমাজের সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত ব্যক্তি বিশেষভাবে নারীও শিশুরা লিগ্যাল এইড থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।  

তিনভাবে আইনজীবীরা আইন সহায়তা কার্যক্রমে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।  

এক. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইন সহায়তা বিষয়ে আইনজীবীদের উদ্বুদ্ধ করার নিমিত্তে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করতে পারে। যেমন-প্রত্যেক আইনজীবীকে বছরে কমপক্ষে দুইটি মামলা বিনা ফিতে পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে লিগ্যাল এইড বিষয়ক কর্মসূচি চালু করতে পারে।  

দুই. স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশন বারের সদস্যদেরকে আইন সহায়তার বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারে।  

তিন. আইনজীবীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিনা ফিতে অথবা নামমাত্র ফিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আইনি সেবা দিতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান  বিচারপতি  এম. ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
 
বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক আমিনুল ইসলাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী শাহীন আনাম।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৯
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।