ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টে তলব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে হাইকোর্টে তলব

ঢাকা: বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামি-দামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের(সাবস্ট্যান্ডার্ড) ৫২ পণ্য বাজার থেকে অবিলম্বে না সরানোয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২৩ মে)  এ আদেশ দেন। আগামী ১৬ জুন তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে হবে।

একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

** সেই ৫২ পণ্য বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আদালতের আদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করে ৫২ পণ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আদালত তা আমলে নেয়ার মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। এ সময় আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিটেস্ট অলরেডি বিএসটিআই শুরু করেছে।

তবে ৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ যদি তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পুনরায় টেস্ট করাতে চায় তাহলে ১৩ জুনের মধ্যে তাদের পণ্য টেস্ট করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১২ মে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

 
বৃহস্পতিবার আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিবেদনে ৫২ পণ্যের একটির প্যাকেটও জব্দ করার বিষয়টি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাকে তলব করেন।

তবে সারা দেশে ৫২ পণ্য জব্দের প্রতিবেদন দেওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সাধুবাদ জানান আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।

প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান; এসিআই-এর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং সান চিপসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। আর বাঘাবাড়ী ঘিয়ের পক্ষে মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী শুনানি করেন।

এর আগে গত ১২ মে শিহাব উদ্দিন খান বলেছিলেন, আদালত সেই ৫২ সাব-স্ট্যান্ডার্ড পণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে আইন অনুসারে ব্যবস্থা (জব্দ বা ধ্বংস) নিতে বলছেন। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়। দুইজন বিবাদী এ বিষয়ে ২৩ মে আদালত আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। এছাড়া আদালত রুল জারি করেছেন।  

গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন।

এর আগে তারা ওইসব পণ্য প্রত্যাহার ও  জব্দ করার জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে দুই সচিবসহ ৫ জনের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।

বিএসটিআই পরীক্ষায় ওইসব কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য ধরা পড়ে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ৬ মে ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

বিএসটিআই-এর বরাত দিয়ে ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য তুলে ধরে নোটিশে বলা হয়েছে, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

যেখানে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল। বিএসটিআই ওই ৫২টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছে।

নোটিশে বলা হয়, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি কিডনি ও লিভারে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কিন্তু অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্যসমূহ জব্দ না করে শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ওইসব নিম্নমানের পণ্য বাজারে বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯/ আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।