ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

খাদ্যে রাসায়নিক প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
খাদ্যে রাসায়নিক প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে নির্দেশ

ঢাকা: খাদ্যে ভেজাল ও ফলমূলে রাসায়নিক প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে  কঠোর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলমূলে কেমিক্যাল ব্যবহার রোধে করা এক রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার (১৮ জুন) এ নির্দেশ দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ।

আদালতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান।
 
গত ২০ মে এক আদেশে হাইকোর্ট ফলে কেমিক্যাল ব্যবহার রোধে সারা দেশের ফলের বাজার ও আড়তে নজরদারি করতে পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিএসটিআই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআই’র কেমিক্যাল টেস্টিং উইংয়ের পরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়নকরতে বলা হয়েছে। সাতদিনের আদেশ পালন করে ১৮ জুন বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিলো।
 
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, বিএসটিআই ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে দুটি প্রতিবেদন আদলতে দাখিল করা হয়েছে। পুলিশের প্রতিবেদনটা এসেছে কিন্তু দাখিল করার জন্য প্রস্তুত করতে না পারায় সময় আবেদন করেছিলাম। আদালত রোববার (২৩ জুন) পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন। একই সঙ্গে ওইদিন প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।
 
বিএসটিআই’র আইনজীবী সরকার এম আর হাসান প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, আমসহ ২৬৫টি মৌসুমি ফল পরীক্ষা করেছে বিএসটিআই। কিন্তু এর কোনোটিতেই ফরমালিনের উপস্থিতি পায়নি। ৪৮টি মোবাইল কোর্ট/সার্ভিল্যান্স টিমের সাহায্যে এই নমুনাসংগ্রহ করা হয়। এছাড়া রমজান মাসে ঢাকা মহানগরের নিউমার্কেট, মালিবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকায় বিভিন্ন মার্কেট ও সুপারশপ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলা শহরে জনসাধারণের উপস্থিতিতেও ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমে ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়েছে। যার কোনোটিতেই ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
 
তবে রাজধানীর যাত্রবাড়ীসহ কয়েকটি আড়তে কার্বাইড দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকানোয় বিষয়টির প্রমাণ পাওয়ায় প্রায় ছয়শ’ মণ আম ধ্বংস করার পাশাপাশি ৩০ লাখ টাকা ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে।
 
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে হবে না। মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে। মানুষ না বাঁচলে কোনোকিছু দিয়েই কিছু হবে না।
 
আদালত আরও বলেন, একদিনের কর্মসূচির দিয়ে আইওয়াশ করবেন আর এটা আমরা দেখব, তা হবে না। মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ভেজালের বিরুদ্ধে আপনারা কঠোর না হলে হবে না। এইসব ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে হাসপাতালে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগীর ভিড় বাড়ছে। আমার আপনার ছেলে-মেয়েদের জন্যও অন্তত ভেজালসহ এসবের বিরুদ্ধে সচেতনতা দরকার।
 
তখন বিএসটিআই’র আইনজীবী বলেন, ফলসহ শাক সবজিতে ফরমালিন, কার্বাইড বা কেমিক্যাল মেশানোর বিষয়ে বিএসটিআই কারওয়ান বাজারের আড়ৎগুলোতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাউন্সেলিং করেছে, সচেতনামূলক কর্মসূচি করেছে।
 
তখন আদালত বলেন, আপনার কি ধারণা ব্যবাসায়ীরা জানে না ফলমূল বা শাক-সবজিতে কেমিক্যাল মেশানো খারাপ? প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী জানে। জেনেও তারা এসব করে।
 
পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএসটিআই এবং সরকারের পক্ষ থেকে দুইটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিএসটিআই’র যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সেটা অসম্পূর্ণ। আদালত বিএসটিআইকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলে রোববার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
 
গত ৯ এপ্রিল রাজশাহীসহ দেশের বড় আমবাগানে কেমিক্যালের ব্যবহার রোধে সাত দিনের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
 
আদেশে একটি পর্যবেক্ষণ টিম ফলের বাজার ও গুদামে মনিটর করবে যাতে সারাদেশে কেউ কেমিক্যাল ব্যবহার করে আম পাকাতে না পারে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিএসটিআই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআই’র পরিচালক (কেমিক্যাল টেস্টিং উইং) এ আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দেবে।
 
আবেদনের পর মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আমবাগানের বিষয়ে সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট রায় দেন। কিন্তু হঠাৎ করে আমরা দেখছি গতবছরের কেমিক্যাল ব্যবহারের প্রবণতা। একারণে আবেদন করেছি নির্দেশনাটা ফের দেওয়ার জন্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুন, ২০১৯
ইএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।