আলাদা তিনটি ধর্ষণ মামলার আসামিদের জামিন শুনানিতে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতের দেওয়া এ সাত দফা নির্দেশনা হুবহু তুলে ধরা হলো-
এক: দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের নির্ধারিত সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
দুই. ট্রাইব্যুনালগুলোকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ধারা ২০ এর বিধান অনুসারে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে।
তিন. ধার্য তারিখে সাক্ষী উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি জেলায় অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। যে সব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সে সব জেলায় সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
চার. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সঙ্গত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।
পাঁচ. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের উপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন।
ছয়. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিসিয়াল সাক্ষী যেমন- ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ব্যতিরেকে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ ও প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ বিবেচনা করবেন।
সাত. আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে উক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন, আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মাহবুব, আইনজীবী গোলাম আক্তার জাকির ও আইনজীবী মার্জিয়া জামান।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন, হাসিনা মমতাজ, মৌদুদা বেগম।
গত বছরের ২৮ জুন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে পুলিশ ২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ পত্র দেয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ গঠন না হওয়ায় আসামি মো. রাহেল ওরফে রায়হান সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে জামিন চাইলে গত ১ জুলাই তার জামিন আবেদনটি খারিজ হয়।
পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন রাহেল। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তার আবেদন খারিজ করে দেন।
ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর নোয়াখালীর নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আসামি সারোয়ার রুবেল ও এমরানকে গত বছরের ২৯ মে এক বছরের জন্য জামিন দেন আদালত। এই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৩ জুলাই তাদের কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল। এই আদেশের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তারা।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেন।
গত বছর ১৭ মার্চ ঢাকার শনির আখড়ায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের মামলায় আসামি সেকান্দার আলীর জামিন চলতি বছরের ২৪ জুন নামঞ্জুর করেন ঢাকার ট্রাইব্যুনাল-৩।
এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট জামিন আবেদনের পর বৃহস্পতিবার তাদের আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
ইএস/এএ