ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসের কার্যক্রম নিয়ে এক মামলার শুনানিতে এ মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২২ জুলাই) আদালতে সহকারী অ্যাটর্নি সায়েরা ফাইরুজ জেনারেল বলেন, প্রতিদিন সকাল ও বিকালে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
‘যে ওষুধ ছিটাচ্ছেন তাতে কি কাজ হয়? আমরাতো দেখছি প্রতিদিনই অসংখ্য লোক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আপনারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করলেন। সেখানে বললেন, ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ। নতুন ওষুধ আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন। এটা বলার পর এখন এসে বলছে, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হঠাৎ করে ওষুধ পেলেন কোথায়? কি ওষুধ ছিটাচ্ছেন?
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, গণসচেতনা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি দুই সিটি করপোরেশনের কর্মসূচি তুলে ধরলে আদালত বলেন, আপনারা বলছেন, জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাহলে আপনাদের কাজটা কী? আপনাদের দায়িত্ব জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। জনগণকে সচেতন করার আগে আপনাদের সচেতন হতে হবে। এত কথা না বলে মশা নিধনে সমন্বিতভাবে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিন।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে মশা নিধনে হাইকোর্ট রুল দেয় না। শুধুই বাংলাদেশে মশা মারতে হাইকোর্টকে আদেশ দিতে হয়।
আদালত আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের নেওয়া কার্যক্রম আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে সেদিন, যেদিন লোকজনের হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ হবে। যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তাতে কাজ হলে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতো না। যদি এটা মহামারি আকারে রূপ নেয় তখন কিছুই করার থাকবে না।
এরপর আদালত আদেশ দেন।
আদেশের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের পরে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে এডিসসহ মশা নির্মূলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে দু’টি বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। আদালত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এজন্য সিটি করপোরেশনের চিফ হেলথ অফিসারকে বৃহস্পতিবার তলব করেছেন।
এর আগে ১৪ জুলাই এক আদেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াবাহিত রোগের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নিতে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) দেওয়া হয়েছে।
২২ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সে অনুসারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্ত প্রতিবেদন দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আদালত। এরপর আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এই দুই কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসার পর ১৪ জুলাই (রোববার) রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন।
রুলে এডিস মশা নির্মূলে ও ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়াসহ এ রকম রোগ ছড়ানো বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না এবং এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র, দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যসচিব, এলজিআরডি সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
ইএস/এএ