মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।
পরে এ কে এম আমিনউদ্দিন জানিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন না করলে আদালত এসব গাড়ি বন্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন। আর এ বিষয়ে পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকাসহ সারাদেশে লাইসেন্স নিয়ে ফিটনেস নবায়ন না করা গাড়ির সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২ লাখ ৬১ হাজার ১১৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৮, রাজশাহী বিভাগে ২৬ হাজার ২৪০, রংপুর বিভাগে ৬ হাজার ৫৬৮, খুলনা বিভাগে ১৫ হাজার ৬৬৮, সিলেট বিভাগে ৪৪ হাজার ৮০৫ এবং বরিশাল বিভাগে ৫ হাজার ৩৩৮টি গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন রয়েছে।
তখন বিআরটিএ’র আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেন, আপনাদের নাকের ডগায় এতো গাড়ি ফিনটেসবিহীনভাবে কিভাবে চলছে। আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?
জবাবে আইনজীবী বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বিআরটিএ ৩৯ হাজার ৮৩৭টি মামলা করেছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ ২৩ হাজার ৩৯২ টাকা। ডাম্পিং করা হয়েছে ২১৪টি গাড়ি এবং ৭২৮ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিআরটিএ মিরপুরে একটি ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) মিরপুরে স্থাপন করেছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় করা হবে।
আদালত বলেন, বিদেশে গাড়িগুলো কত সুন্দর। কোনো দাগ নেই। আর আমাদের গাড়িগুলো লুকিং গ্লাস নেই। হেডলাইট নেই। দাগ, রং নেই। জবাবে আইনজীবী বলেন, প্রাইভেট গাড়িগুলো ঠিক আছে। কিন্তু পাবলিক গাড়িগুলো দুর্ঘটনায় পড়ার পর আর ঠিক করে না।
এরপর আদালত বলেন, আমরা দুই মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে আপনারা পত্রিকায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেবেন, এসব গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করার জন্য। এরপর ১৫ অক্টোবরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবেন। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে। সেসব গাড়ি দুই মাসের মধ্যে নবায়ন করবে না, পরে তাদের রাস্তায় চলতে দেবো না। আমরা বিষয়টি স্ট্রিকলি দেখবো। আমরা কারো পক্ষে বিপক্ষে নই। আমরা মানুষের পক্ষে। দেশ ও জাতির কল্যাণের পক্ষে।
গত ২৪ জুন আদালত ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। সে অনুসারে বিআরটিএ হাইকোর্টে প্রতিবেদন।
এর আগে গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি সংক্রান্ত একটি ইংরেজি দৈনিকে গত ২৩ মার্চ একটি প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। এরপর ওইদিন আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
‘রুলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর বিষয়ে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, পাশাপাশি সংবিধানের ৩২ ধারার আলোকে জীবন বাঁচার অধিকার বাস্তবায়নে কেন মটর ভেহিক্যাল আইন ১৯৮৩ এর বিধানগুলো সঠিকভাবে পালনের জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না’, তা জানতে চেয়েছেন।
রুলের বিবাদীরা হচ্ছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, চেয়ারম্যান বিআরটিএ, ঢাকার ডিসি ট্রাফিক (উত্তর ও দক্ষিণ), বিআরটিএ ডাইরেক্টর (রোড নিরাপত্তা) ও দুদক চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯/আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস