ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলেছিলেন খালাস পাওয়া মিজান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলেছিলেন খালাস পাওয়া মিজান

ঢাকা: হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় খালাসপ্রাপ্ত আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া বক্তব্যের দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি সেই মিজান নই, আমি মাছ ব্যবসায়ী মিজান। শুধু নামের কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৩০ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে মিজান বক্তব্য রাখেন। এদিন রাজীব গান্ধীও আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন।

অপর ছয় জন লিখিত বক্তব্য জমা দেন।

মিজান সেদিন আদালতে বলেন, আমি অন্যায় করিনি। আমি মাছের ব্যবসা করতাম, মাছ ব্যবসায়ী। আমি সেই মিজান নই, আমি মাছ ব্যবসায়ী মিজান। শুধু নামের কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  এ বিষয়ে বগুড়ার ডিবি পুলিশকে জানানো হয়। ওরা ১৬ দিন আমাকে রেখে তদন্ত করে। ওখানে চার মাস থাকার পর এডিসি সানোয়ার হোসেন তদন্ত করে একটি মামলা দিয়ে ছেড়ে দেয়। আমি কিছু করিনি। আমি কিছুই জানি না। আমি মাছ ব্যবসা করতাম।

তিনি বলেন, কিছুদিন পর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীরের হাতে আমাকে তুলে দেয়। হুমায়ূন কবীর আমাকে হলি আর্টিজান মামলার আসামি করে ১০ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত আমার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর আবার তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

তিনি বলেন, আমি গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ। এই হামলার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমি ঘৃণা করি। আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। তারা যা শিখিয়ে দিয়েছে আমি সেটাই আদালতে বলেছি।

মিজানের আত্মপক্ষ সমর্থনে দেওয়া এই বক্তব্য কতটা আদালত আমলে নিয়েছেন তা জানা যায়নি। তবে মামলা সংশ্লিষ্ট এক আইনজীবী জানিয়েছেন, মিজানের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তেমন জোরালো প্রমাণ ছিল না। সহ-আসামিরাও আদালতে স্বীকারোক্তিতে শুধু তার ব্যাপারে বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত মিজান অর্থ সরবরাহ করে।

অবশ্য রায়ে খালাস পাওয়ার পর মিজানকে বেশ উল্লাসিত দেখা যায়। রায় ঘোষণার পর এজলাসের ভেতরেই আনন্দে জোরে জোরে আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করতে থাকে।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বাংলানিউজকে বলেন, মিজানের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রাপ্ত যাবতীয় সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। আদালত কী বিবেচনায় তাকে খালাস দিয়েছেন সেটা রায়ের কপি না দেখে বলতে পারবো না। রায়ের কপি দেখে পর্যালোচনা করে তার খালাসের দণ্ডের বিষয়ে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

এক বছরের বিচারকালে মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
কেআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।