পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোর পথে আসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দু’বছরে আগের দু’বছরের থেকে মাদকবিরোধী অভিযান, মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে এ দু’বছরে অর্থাৎ রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের আমলেই গোটা দেশের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে চালু হয় মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের আলোর পথে ফিরে আসার সুযোগ। যে সুযোগের আওতায় কোনো মাদকসেবী বা বিক্রেতা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তাকে সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা, মামলা পরিচালনা ও পুনর্বাসনের সহায়তাও করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ সুস্থ জীবনে ফিরে এসে আবার মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বরিশাল রেঞ্জের ছয় জেলায় প্রায় ১৪০০ মাদকসেবী ও বিক্রেতা সুস্থ জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয়ে পুলিশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। যার মধ্যে এক হাজারের ওপরেই রয়েছেন মাদকবিক্রেতা।
মোট আত্মসমর্পণকারীর এখন পর্যন্ত ৩৪৩ জনকে চিকিৎসার জন্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতে ফেরত এসেছেন ৩০৮ জন এবং বাকি ৩৫ জন এখনও নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া ৩৯০ জন আত্মসমর্পণকারীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং ২৮১ জন আত্মসমর্পণকারীর লিগ্যাল এইডে মামলা পরিচালনার জন্য আবেদন গৃহীত হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মাদক সমাজের অনেক বড় ক্ষতি করে। বিশেষ করে যুবসমাজ অর্থাৎ ভবিষ্যত প্রজন্ম এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মাদক ব্যবসায়ীরা মামলা পরিচালনা, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে ইচ্ছে করলেও ওই পথ থেকে সরে আসতে পারেন না।
তিনি বলেন, আমরা মাদকসেবী ও বিক্রেতার আলোর পথে ফিরে আসার যে সুযোগ দিচ্ছি তাতে শুরু থেকেই ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৫০ জনের মতো মাদকসেবী ও বিক্রেতা আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। তাদের চিকিৎসা দেয়া, পুনর্বাসন করা, পূরাতন মামলাগুলো পরিচালনার জন্য লিগ্যাল এইডের সহায়তা করার মতো কাজগুলো আমরা হাতে নিয়েছি। এ লক্ষ্যে স্বপ্ন তরী সমবায় সমিতির কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু আত্মসমর্পণ নয় আমরা গত দু’বছরে মাদকবিরোধী প্রচুর অভিযান ও প্রচারণা চালিয়েছি। যার কারণে প্রচুর মাদক উদ্ধার ও মাদক সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করেছি। আমরা চাই সকলের সহযোগিতায় সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে।
এদিকে রেঞ্জের পুলিশ সুপাররা বলছেন, বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কারণে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিটি বাড়ির খোঁজ-খবর রাখতে পারছেন। এর ফলে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের বিষয়টিও পুলিশের নজরে সহজে চলে আসছে। মাদক ব্যবসা বরিশাল রেঞ্জ থেকে এখনো নির্মূল না হলেও মাদক বিক্রেতারা অনেকটাই কোনঠাসা দাবী তাদের।
জানা গেছে, বরিশাল রেঞ্জের ছয় জেলায় বর্তমানে বিটের সংখ্যা ৪০১টি এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের তিন হাজার ৬৬১টি (পুর্নগঠিতসহ) কমিটি ও ২২৬টি স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এমএস/এবি