ঢাকা: ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থেকেও জেলায় জমি না থাকায় পুলিশে চাকরি না পাওয়া খুলনার মীম আক্তারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামীকালের মধ্যে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেছেন।
মীমের বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।
পরে তিনি জানান, জমি না থাকায় চাকরি হয়নি খুলনার মীমের-এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতের নজরে আনি। আদালত বিষয়টি দেখে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে খোঁজ নিয়ে আগামীকালের মধ্যে জানাতে বলেছেন।
এ সময় আদালত বলেন, ‘জমি না থাকায় চাকরি হবে না, এটাতো হতে পারে না। পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে এতে তো তাকে আরও উৎসাহ দেওয়া উচিত। প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়। তারা কি চাকরি পাবে না। ’
এদিকে মঙ্গলবার সকালে বাংলানিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের প্রতিবেদনে ‘ভূমিহীন’ মীম আক্তারের চাকরি হওয়া নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটছে এবার। তার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঘর ও জমি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার।
জেলা প্রশাসক বলেন, মীম খুলনার অস্থায়ী বাসিন্দা। যে কারণে তার পুলিশ কনস্টেবলে চাকরি হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে শহর সংলগ্ন বটিয়াঘাটা উপজেলায় মীমকে জমিসহ ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি, এবার চাকরি হবে।
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সব পরীক্ষায় প্রথম হয়েও স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে জটিলতায় চাকরি না পাওয়া মীমের বাবা রবিউল ইসলাম সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে মীমকে ঘরসহ জমি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর আগে, খুলনা জেলা পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ফলাফলে মেধাক্রমে প্রথম হন মীম আক্তার। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা জটিলতায় পুলিশ প্রতিবেদন তার বিপক্ষে যায়। এর কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ে যান মীম।
সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থেকেও পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট হওয়ার পরও খুলনা জেলার কোটায় আবেদন করায় মীম বাদ পড়েন।
খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে মীমকে জানানো হয়েছিল, খুলনার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় চাকরিটি তাকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মীমের আবেদনপত্র সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের ডা. বাবর আলীর ভাড়াটিয়া বাড়ির বাসিন্দা তিনি। তার বাবা মো. রবিউল ইসলাম।
অনুসন্ধানীতে জানা গেছে, মীম সব ধাপ পার করলেও পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে যাওয়ার কারণ তার জমি-জমা বা স্থায়ী ঠিকানা নেই সেটা নয়। মীমের স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাটের চিতলমারিতে। কিন্তু বিষয়টি তিনি গোপন করেছেন, জানাননি এবং আবেদনেও উল্লেখ করেননি।
মীমের বাবার ভাষ্য, তার নামে কোন সম্পত্তি নেই। বাবার সম্পত্তি আছে তা এখনও ভাগ হয়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি ও ঘর দেওয়ার ঘোষণার পর চাকরি হবে কিনা এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মীমের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আলোচনা চলছে। এখনও সেখান থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
মীমের বাবা রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের বলেছেন আপনাদের জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখছি। এছাড়া এডিশনাল এসপি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে মীমের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমরা আশাবাদী মেয়ে চাকরিটি পাবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি ৩২ বছর খুলনায় আছি তার প্রমাণসরূপ যে যে বাড়িতে ভাড়া থেকেছি তাদের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র এবং আমার মেয়ের পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন ও ভোটার আইডিকার্ডের স্লিপ সোমবার নিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
ইএস/এএটি