ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জাপান থেকে আসা শিশুরা ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
জাপান থেকে আসা শিশুরা ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে

ঢাকা: জাপান থেকে আসা সেই দুই শিশু নিয়ে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মা ডা. এরিকো নাকানোর কাছে থাকবে। তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত  বাবা ইমরান শরীফ এইসময়ে স্বাধীনভাবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে যেকোনো সময় শিশুদের সাথে দেখা করতে পারবেন।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

এর আগে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুই শিশুকে সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। পরে সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে তাদের বাবা ইমরান শরীফ আপিল বিভাগে দুই শিশুকে নিয়ে আসেন। এরপর খাস কামরায় দুই শিশু, তাদের বাবা-মা এবং আইনজীবীদের কথা শোনেন আপিল বিভাগ। তারপর রোববারের (১২ ডিসেম্বর) আদেশ অনুসারে দুই দিন শিশুদের মায়ের কাছে রাখার কথা বলে একইসঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি আপিল বিভাগ।

তার ধারাবাহিকতায় আবেদনটি কার্যতালিকায় আসে।

এর আগে রোববার (১২ ডিসেম্বর) মায়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে দুই শিশুকে দুই দিন মায়ের কাছে রাখার আদেশ দেন। একইসঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে তাদের আপিল বিভাগে নিয়ে আসার আদেশ দেন।

কিন্তু আদেশ মতো রোববার রাত ১০টায় শিশুদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে সোমবার সকালে আদালতকে অবহিত করেন মায়ের আইনজীবী।

গত ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।

রায়ে আদালত বলেন, এ রিটটি চলবে। দুই মেয়ে পাঁচ নম্বর বিবাদীর (ইমরান শরীফ) হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক এবং সেখানে বসবাস ও কর্মরত আছেন সেই কারণে তিনি তার সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের সব ধরনের খরচ পাঁচ নম্বর বিবাদীকে (ইমরান শরীফ)  বহন করতে হবে। এর বাইরে যাওয়া-আসার খরচ দরখাস্তকারী (মা) বহন করবেন। ছুটির দিনে অন্তত দুইবার শিশুদের সঙ্গে ভিডিও কলে মাকে কথা বলিয়ে দেবেন ইমরান শরীফ। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ আগামী সাত দিনের পাঁচ নম্বর বিবাদী দরখাস্তকারীকে ১০ লাখ টাকা দেবেন।

রায়ে আরও বলা হয়, রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে পক্ষগুলো আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। তাকে প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ ও জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর দুই শিশু বাবার জিম্মায় থাকবেন বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

মা এরিকো নাকানোর এ আবেদন ৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১২ ডিসেম্বর শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন। সে অনুসারে আবেদনটি রোববার নিয়মতি বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়।  

তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় সবাইকে আলাদা কক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন। পাশাপাশি সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু উভয়পক্ষের আইনজীবীরা কয়েকবার বৈঠকেও সমঝোতায় আসতে পারেননি।

সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মেয়েদের এরিকোর সঙ্গে গুলশানের বাসায় থাকার আদেশ দেন। আর বাবা ইমরান শরীফকে দিনের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা ও সময় কাটাতে পারবেন বলে সুযোগ দেন। পরে ৩১ অক্টোবর ২ রিটের শুনানি শেষে ২১ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়:১১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
ইএস/এসআাইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।