ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অডিটর নিয়োগ: প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
অডিটর নিয়োগ: প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে

ঢাকা: প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের অধীন অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।  

এই অভিযোগে গ্রেফতার ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রূপাসহ ১০ জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এই ১০ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সন্দেহে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদনসহ গত ২২ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার দুইজন তদন্ত কর্মকর্তা পৃথকভাবে ১০ আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কাফরুল ও রমনা থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে মর্মে আদালতকে অবহিত করেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা রহিতকরণের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এই ১০ আসামির মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল হান্নান। তিনি নিজেই বাদী হয়ে ২০১৮ সালের কাফরুল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩/২৪/৩৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে এসআই আব্দুল হান্নান উল্লেখ করেন, আসামি নোমান সিদ্দিকী (৪২), নাইমুর রহমান তানজির (১৮) ও শহিদুল্লাহকে (২৬) দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া আসামি মাহমুদুল হাসান আজাদ (৪৫) গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থতাবোধ করলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৪ জানুয়ারি তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পলাতক আসামি ফারুক ও রায়হানসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে অবৈধ লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিটার্টমেন্টে ‘অডিটর পদ’ নিয়োগ এ নিয়োগ পরীক্ষা-২০২২সহ বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগ প্রার্থী সংগ্রহ করে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর অবৈধভাবে পরীক্ষার হলে সরবরাহ করেছে।  

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি নোমান সিদ্দিকীর দেওয়া তথ্য মতে তার জব্দ করা মোবাইলফোনের হোয়াটস্যাপ থেকে ২৩ পৃষ্ঠার এবং ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জার থেকে দুই পাতা স্ক্রিনশট জব্দ তালিকা মূলে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে প্রিন্ট করা হয়।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ইলেক্ট্রিক ডিভাইস নিজেদের হেফাজতে রাখিয়া অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এবং পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রদান ও সহায়তা করে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩/২৪/৩৫ ধারায় অপরাধ সংঘটন করেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।

গ্রেফতার চার আসামিকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানোসহ ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নুরে আলম সিদ্দিকী।  

শিগগিরই রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানি হবে বলে জানান মামলার বাদী এসআই আব্দুল হান্নান।

এদিকে একই ঘটনায় মাহবুবা নাসরিন রূপাসহ ৮ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের নামে রমনা থানায় একই আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিবির সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের উপ-পরিদর্শক শহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

গত ২২ জানুয়ারি গ্রেফতার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রূপা, আল আমিন আজাদ রনি (৩০), মো. রাকিবুল হাসান (২৬), মো. হাসিবুল হাসান (২৪), মো. নাহিদ (২৬), মো. রাজু আহম্মেদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। সেই রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) তাদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এই ছয় জনের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা চলমান বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ফাঁস করে প্রতারণা পূর্বক মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছে মর্মে স্বীকার করেন। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত আছেন বলে জানায়। আসামিরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। অন্যান্য জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

মামলার বাদী গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শহিদুর রহমান জানান, গ্রেফতার ছয় আসামিকে ১০ দিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানি হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস: ভাইস চেয়ারম্যান রূপাসহ ১০ জন কারাগারে

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২২
কেআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।