ঢাকা: বিচারিক আদালতে পুলিশের বরখাস্তকৃত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে অর্থ পাচারের ধারা থেকে খালাসের বিরুদ্ধে দুদকের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১০ এপ্রিল) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
ঘুষ লেনদেনের মামলায় দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় তিন বছরের দণ্ড হলেও পুলিশের বরখাস্তকৃত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান অর্থ পাচারের অভিযোগে খালাস পেয়েছিলেন।
আর এ অর্থপাচার আইনের ৪ ধারায় খালাসের বিরুদ্ধে এবার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান জানান, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় খন্দকার এনামুল বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু মিজানুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল করে। এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে মিজানুর রহমানও আপিল করেছিলেন। এ দু’টি আপিলের শুনানি একসঙ্গে হবে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন।
রায়ে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্তকৃত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া এনামুল বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও এনামুল বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় এনামুল বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এনামুল বাছিরের দু’টি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
পরে মিজানুর রহমান হাইকোর্টে তিন বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। হাইকোর্ট তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। আর তার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ১৩ এপ্রিল বুধবার দিন রেখেছেন।
অপরদিকে খন্দকার এনামুল বাছিরও দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তার বিষয়ে এখনো শুনানি হয়নি।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক এনামুল বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে।
অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেফতার করা হয়।
এ মামলায় ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
পরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন। অপরদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এনামুল বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২২
ইএস/এসআই