ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাতক্ষীরায় বন্ধু হত্যায় কলেজছাত্রের যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
সাতক্ষীরায় বন্ধু হত্যায় কলেজছাত্রের যাবজ্জীবন মোবাশ্বির

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনিতে প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা মনে করে বন্ধুকে হত্যার দায়ে মোবাশ্বির হোসেন (২৩) নামে এক কলেজছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত মোবাশ্বির হোসেন আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।  

মামলার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের শঙ্কর সরকারের ছেলে চন্দ্রশেখর সরকার ও একই গ্রামের মোবাশ্বির হোসেন ছোটবেলা থেকে একই সঙ্গে পড়ালেখা করতেন। শোভনালীর নলকুড়া বিলে তাদের দু’জনেরই পৈত্রিক মাছের ঘের রয়েছে। চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজ থেকে একই সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর চন্দ্রশেখর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ও মোবাশ্বির হোসেন আশাশুনি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। এদিকে মোবাশ্বিরের সঙ্গে একই গ্রামের হিন্দু একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই ধর্মের দু’জনের প্রেম মেনে নিতে পারেননি চন্দ্রশেখর। এনিয়ে বাগবিতণ্ডা হতো দু’বন্ধুর মধ্যে। এর ধারাবাহিকতায় চন্দ্রশেখরকে পথের কাটা ভেবে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মোবাশ্বির।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে চন্দ্রশেখরকে বাড়ির পাশের একটি ঘেরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেয়েটিকে নিয়ে কথা উঠলে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে চন্দ্রশেখরকে মারপিট করতে থাকেন মোবাশ্বির। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘেরের পানির মধ্যে মরদেহ ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করেন তিনি। পরদিন ওই ঘের থেকে চন্দ্রশেখরের মরদেহ উদ্ধার করে আশাশুনি থানা পুলিশ। ২০ অক্টোবর নিহতের বাবা শঙ্কর সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং- জিআর-২৫৬/২০। পুলিশ রাতেই সাতক্ষীরার একটি বাসা থেকে মোবাশ্বিরকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। তিনি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান মোবাশ্বির। এখনো তিনি পলাতক।

এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশাশুনি থানার সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কবীর গত বছরের ৩১ মে মোবাশ্বির হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পলাতক অবস্থায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিছুজ্জামান আনিছ আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

মামলার নথি ও ১৪ জন সাক্ষীর জেরা-জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি মোবাশ্বিরের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বয়স বিবেচনায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার সময় আসামির বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। বয়স বিবেচনায় তাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।