ঢাকা: জনপ্রিয় লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যার ১৮ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা হবে বুধবার (১৩ এপ্রিল)।
এদিন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুনের আদালতে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
গত ১৮ জানুয়ারি এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। এরপর গত ২৭ মার্চ আসামিপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায়ের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান চৌধুরী জানান, আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কারাগারে থাকা দুই আসামি মিনহাজ ও আনোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাই সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আমরা আশাবাদী।
তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ মনে করেন আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।
রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। আসামিরা যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রপক্ষ তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। তাই আমরা আশা করছি, ন্যায়বিচার হবে এবং আসামিরা খালাস পাবেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ড. হুমায়ুন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনার পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ২২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। সবশেষ জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান।
মামলাটিতে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, নূর মোহাম্মদ সাবু ওরফে শামীম, মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার ওরফে ভাগ্নে শহিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। তবে ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যা মামলায় শায়খ আব্দুর রহমান ও আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
এরপর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে বাদী মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। অধিকতর তদন্তে হত্যা মামলায় রূপান্তর করে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল সিআইডি পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
এই পাঁচ আসামি হলেন- জেএমবির সূরা সদস্য আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। যুদ্ধাপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে এই মামলার আসামি করা হয়। তবে, পরে সাঈদীসহ আরও পাঁচজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
আসামিদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আছেন। তারা দুইজনই ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আসামি নূর মোহাম্মদ শুরু থেকেই পলাতক। তবে, সালাহউদ্দিন সালেহীন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেফতার হয়েছিলেন। তবে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। সালেহীন তখন পালিয়ে গেলেও হাফিজ মাহমুদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। তাই হাফিজকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এই মামলায় ২০১২ সলের ১০ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচার চলাকালে মোট ৪১ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ১৮ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
কেআই/এএটি