ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা: ৬ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা: ৬ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রাম: ধর্মান্তরিত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ৬ জেএমবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত।  

আদালত প্রাঙ্গণে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যদের কারাগারে পাঠানো হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুল মান্নান জরাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।  

এ রায়ে হত্যা মামলায় ৩০২/৩৪/১০৯ ধারায় ৬ আসামিকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতের আদেশ দেন। এ সময় পলাতক আসামি রিয়াজুল ইসলাম মেহেদী ছাড়া বাকি ৫ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
 
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর ওরফে রাজিব ওরফে রাজীব গান্ধী, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী, গোলাম রাব্বানী, হাসান ফিরোজ ওরফে মোখলেস, মাহবুব হাসান মিলন ওরফে হাসান, আবু নাসির ওরফে রুবেল। পলাতক থাকা রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী বাদে দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।  

আলোচিত এ হত্যা মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনের ৩ ধারায় জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, গোলাম রাব্বানী ও হাসান ফিরোজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ১ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারক। এছাড়াও বিষ্ফোরক আইনের ৪ ধারায় এই তিনজনকে আবারও ২০ বছরের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
 
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন আর আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির। রায় ঘোষণার পর পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আসামিরা কান্না জড়িত কন্ঠে নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমরা ঘটনার কিছুই জানি না, আমরা নির্দোষ।  

আদালত মুলতবি ঘোষণা হলে তারা চিৎকার করে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার এই অন্যায় আদেশের জন্য আল্লাহ আপনাকে ধ্বংস করবে, আল্লাহ আপনাকে ধ্বংস করবে।

এর আগে, আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিকেল পৌনে তিনটার দিকে কুড়িগ্রাম জেল কারাগার থেকে আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার বলয়ে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর পর আসামিদের কুড়িগ্রাম কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।  

নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর এক ছেলে ও মামলার বাদী রুহুল আমিন আজাদ রায় ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ সময় পর হলেও আমার বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় ঘোষণায় আমরা খুশি। আমরা চাই দ্রুত আদালতের এ রায় কার্যকর করা হোক।

কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বাংলানিউজকে জানান, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাসহ রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। এটি কোনো সাধারণ হত্যা নয়, একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে। আসামিরা আদালতে দেওয়া তাদের জবানবন্দীতে সেটি স্বীকারও করেছেন। পরবর্তীতে তারা তাদের এই জবানবন্দী প্রত্যাহারও করেননি। এই রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

অপরদিকে আসামিপক্ষের রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত লিগ্যাল এইডের অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমরা হাতে পাইনি। রায়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আসামিরা চাইলে রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের কৃষ্ণপুর গাড়িয়াল পাড়ার কাছে গড়ের পার এলাকায় প্রাতঃভ্রমণে বের হন ওই এলাকার বাসিন্দা ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী। সকাল পৌনে ৭টার দিকে ওই এলাকার আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরে পাকা রাস্তার ওপরে হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করেন জেএমবি সদস্যরা। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের আটকের চেষ্টা করলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন হত্যাকারীরা। ওইদিনই অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেন হোসেন আলীর ছেলে রুহুল আমিন আজাদ। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয় সেই সময়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এফইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।