ঢাকা: কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী ও কলাতলী সমুদ্রসৈকত এলাকায় ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে চেম্বার আদালতের আদেশ থাকায় ২৩৩টি উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
তলবে হাজিরের পর শুনানি শেষে জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৯ নভেম্বরের আদালতের আদেশ প্রতিপালনের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর আগে, সমুদ্রসৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বুধবার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ হাইকোর্টে হাজির হন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। জেলা প্রশাসকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
আদালতে একটি হলফনামা জমা দেন জেলা প্রশাসক। সেই হলফনামায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের জেলা প্রশাসকের পাঠানো একটি স্মারক যুক্ত করা হয়।
সেই স্মারকে বলা হয়, আদালতের আদেশ অনুসরণে উচ্ছেদ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ১০ অক্টোবর পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী ও কলাতলী সমুদ্র সৈকত এলাকায় ৪১৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু দুটি সমিতি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আদেশ দেখান।
ওই আদেশে দেখা যায় সুগন্ধা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে জাকির হোসেন ও অপর একজন সমুদ্রসৈকতে অবস্থিত তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় আকুতি করেন। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেন এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদ না করার আদেশ দেন। ফলে ১০ অক্টোবর দুটি সমিতির ২৩৩টি (১৪৩+৯০) দোকান উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
তবে সরেজমিন পরিদর্শেনে দেখা গেছে, দোকারিদের মালামাল বেশিরভাগই সরিয়ে নিয়েছেন এবং অবশিষ্ট মালামাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এর আগে, ২৫ আগস্ট আদালত অবমানার অভিযোগের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করে তাকে তলব করেন।
যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন, তারা হলেন- কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, উপ-পরিচালক, টাউন প্লানার তানভির হাসান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনর রশিদ, পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও কক্সবাজার পৌরমেয়র মজিবর রহমান।
ওইদিন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, কক্সবাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা পর সেটা উচ্ছেদও করা হয়েছিল। কিন্তু ইদানিং প্রায় ১শ’র মত দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার মাস আগে আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। এরপর দীর্ঘ শুনানির পর বার বার সময় নেওয়ার পরও জেলা প্রশাসক ওইসব স্থাপনা উচ্ছেদ করেননি। যে কারণে আজকে জেলা প্রশাসকসহ সবার ওপর আদালত অবমনানর অভিযোগে একটা রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে ১৯ অক্টোবর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এর আগে, ৭ ফেব্রুয়ারি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সোমবার এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
নোটিশে বলা হয়, কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখতে সেখান থেকে সব অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থে এইচআরপিবি আদালতে রিট মামলা দায়ের করলে আদালত রায় দেন। রায়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৭ জুন বিবাদিদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও এখনও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কয়েকদিন আগে এইচআরপিবির প্রতিনিধি সমুদ্রসৈকত এলাকায় পর্যবেক্ষণে গেলে ওই এলাকায় অনেক অবৈধ দখল ও স্থাপনা দেখতে পান। যদিও এর আগে রায় হওয়ার পরে আদালতের নির্দেশে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। বর্তমানে উক্ত দখল ও স্থাপনা ভাড়া দিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা আয় করছে কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা আদালত অবমাননার সামিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯,২০২২
ইএস/এএটি