ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দুশ্চিন্তা দূরীকরণে আদালতের দরজায় টাঙানো হলো ১১টি অনুরোধ

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
দুশ্চিন্তা দূরীকরণে আদালতের দরজায় টাঙানো হলো ১১টি অনুরোধ

পঞ্চগড়: একটা সময় আদালতকে নিয়ে মানুষের মুখে নানা জল্পনা, কল্পনার ও কুরুচি সম্পন্ন কথা শোনা গেলেও বর্তমান সময়ে বিচারকের ভিন্ন পদক্ষেপে আদালতকে নিয়ে দূর হয়েছে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা। এতে করে সর্বদায় আলোচনায় উঠে এসেছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ভিন্ন বিচার কাজের।

অবশেষে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী মানুষের দুশ্চিন্তা দূরীকরণে নতুন আরেকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে নজির স্থাপন করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মতিউর রহমান।

বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ভ্রান্তি দূর করতে আদালতের দরজায় টাঙানো হয়েছে এগারোটি অনুরোধ।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমান। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে পোস্টের পর সবার কাছে নতুন করে আবারও শুভেচ্ছা, ভালোবাসায় বাহবাহ পাচ্ছেন তিনি।

বিচারক মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার নিজস্ব চিন্তা থেকে আমি এটা করেছি। এতে বিচারপ্রার্থী মানুষের দুশ্চিন্তা আদালত সম্পর্কে ভীতি দূর হচ্ছে এবং তারা ভালো ফল পাচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশে আমার আদালতেই আমি এমন ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর আগে আমি একাধিক পারিবারিক মামলার বিচ্ছেদের মধুর সমাপ্তি করেছি। গত বছর শীতে আদালতের আসামি কাঠগড়ায় কারপেটসহ চলতি বছরে আদালত কারাগারে অপেক্ষারত আসামিদের বই পড়ার জন্য দুটি কারা পাঠাগার স্থাপন করেছি।

তবে যাই কিছু করছি নিজের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে কাজগুলো করছি বলে তিনি জানান।

এদিকে আদালতের দরজায় টাঙানো এগারোটি অনুরোধ হলো-
১. ছোটখাটো বিরোধগুলো নিজেদের মধ্যে আপসে মীমাংসা করুন। আপনার শিশু সন্তানের কথা বিবেচনা করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্বগুলো মীমাংসা করুন। সংসার সমাজে ও পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে আসবে। মামলা আপস হলে বিচারকের কাছ থেকে আপনি পাবেন দুটি চকলেট। আর আপনার বিজ্ঞ আইনজীবীও পাবেন দুটি চকে।

২. ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন প্রত্যেকটি মামলা শুনানির জন্য ডাক পড়বে।

৩. causelist.judiciary.org.bd এ লিংকে অত্র আদালতের প্রতিটি মামলার পরবর্তী তারিখ ও ফলাফল দেওয়া আছে। প্রয়োজনে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে এ লিংক থেকে আপনার মামলার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।

৪. অত্র আদালত  থেকে কোনো সাক্ষীকে ফেরত দেওয়া হয় না। সমন পেয়ে সাক্ষী দিতে এলে আদালতের ভেতরে পেছনের বেঞ্চে বসে দয়া করে অপেক্ষা করুন। যথা সময়ে আপনার মামলার ডাক পড়বে। সাক্ষ্য দিতে আপনাকে সহযোগিতা করা হবে।

৫. আপনি পরীক্ষার্থী হলে বা সামনে আপনার পরীক্ষা থাকলে অযথা সময় নষ্ট না করে আদালতের বারান্দায় রক্ষিত বেঞ্চে বসে বই বা নোট পড়তে পারেন। এজন্য সঙ্গে বই নিয়ে আসুন।

৬. এ আদালতের বিচারকের কাছে শিশুদের জন্য চকলেট আছে। শিশু কান্নাকাটি করলে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। দুগ্ধপোষ্য শিশু বা ছোট শিশু থাকলে তার মামলা আগে শুনানি করা হয়।

৭. নামাজের সময় দয়া করে অপেক্ষা করুন। নামাজের পর আপনার মামলার শুনানি হবে।

৮. পেছনের একটি বেঞ্চ সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষের বসার ব্যবস্থা আছে। দয়া করে তাদের বসতে সহায়তা করুন।

৯. এ আদালতে দীর্ঘ সময় ধরে মামলার শুনানি হয়। আদালতের নিচ তলায় ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ক্ষুধা লাগলে নিজ টাকায় খেয়ে আসুন। টেনশন করবেন না, নিশ্চিত থাকুন- আপনার মামলার শুনানি হবে।

১০. আদালতে আসামির কাঠগড়ায় ও হাজত থানায় আসামিদের পড়ার জন্য দুটি বুক সেলফ আছে, যা ‘আদালত পাঠাগার’ নামে পরিচিত। আপনি প্রয়োজনে সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন।

১১. মনে রাখবেন ন্যায়বিচার পাওয়া আপনার অধিকার কোনো অনুকম্পা বা দয়া নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।