ঢাকা: ঋণের বিপরীতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এ বর্ণিত উপায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
একটি ব্যাংকের ঋণ খেলাপির অভিযোগে করা চেক ডিজঅনার মামলায় দণ্ডিত এক ব্যক্তির আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে ওই ব্যক্তির আপিল গ্রহণ করে সাজা বাতিল করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন।
তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন।
২০১১ সালের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সেলিমগঞ্জের বরাইল মধ্যপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নেন। পরে ৩৬ কিস্তির মধ্যে ২২ কিস্তি দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে কিস্তি জমা দিতে না পেরে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকার চেক দেন। কিন্তু এ চেক ডিজঅনার হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই মামলা করে। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২০ জুন মোহাম্মদ আলীকে বিচারিক আদালত ৬ মাসের সাজা ও ২ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ টাকা জরিমানা করেন।
এর বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন মোহাম্মদ আলী। ওই আপিলের শুনানি শেষে বুধবার রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আপিল গ্রহণ করে তাকে ৬ মাসের সাজা থেকে খালাস দেন। পাশাপাশি মোহাম্মদ আলীকে ৫০ শতাংশ তথা এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা ১০ দিনের মধ্যে দিতে ব্যাংককে নির্দেশ দেন বলে জানান আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।
রায়ে ঋণের বিপরীতে বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সকল চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছেন আদালত।
রায়ে আদালত আরও বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে, সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।
আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটা চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।
আদালত আরও বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ দিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।
হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে ঋণের বিপরীতে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে, তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একইসঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।
এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ে শুধু অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে নয়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও সকল প্রকার ঋণের বিপরীতে ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
ইএস/এমজেএফ