ঢাকা: সেলিব্রেটিদের জন্য ২৭ বছর বয়সটি যেনো অভিশপ্ত। কোনো এক রহস্যজনক কারণে এই ২৭ বছর বয়সে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি বিশেষ করে সংগীত শিল্পী অকালে ঝরে গেছেন।
এই ক্লাবের সর্বশেষ সদস্য হিসেবে পেলাম ব্রিটিশ গায়িকা ও গীতিকার অ্যামি ওয়াইনহাউসেকে। গত ২৩ জুলাই শনিবার লন্ডনের বাসায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও এটুকু জানা গেছে, সম্প্রতি এমনকি গত মাসেও তিনি জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ঘন ঘন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। তার অসুস্থতার কারণ আর কিছুই না অতিমাত্রায় অ্যালকোহল সেবন এবং মাদকাসক্তি। পাঁচ পাঁচ বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জেতা এই শিল্পীর প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
এই ক্লাবের এমনি সদস্য রয়েছেন আরও অনেকে।
খ্যাতিমান ইলেক্ট্রিক গিটারিস্ট জিমি হেনড্রিক্স মারা যান ১৯৭০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। গত শতকের সেরা গিটার বাদকদের মধ্যে তিনি একজন। এক পার্টিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বান্ধবির নটিং হিলের বাসায় তাকে নেওয়া হয়। সেখানেই পরদিন সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে জানা যায় অতিরিক্ত ওয়াইন ও ঘুমের ওষুধ সেবনের কারণে বমির চোটে শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।
বিখ্যাত গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপটন এক সময় বলেছিলেন, মার্কিন ব্লু ব্যান্ডের তৎকালীন জীবিত গায়কদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন রবার্ট লেরয় জনসন। কিংবদন্তি এই গায়ক মারা যান সেই ২৭ বছর বয়সে। ১৯৩৮ সালের ১৬ আগস্ট অজ্ঞাত কারণে আকস্মিকভাবে তিনি মারা যান। তবে ধারণা করা হয় তার এক প্রেমিকার ঈর্ষাপরায়ণ স্বামীর দেওয়া স্ট্রিকনিন বিষে তার মৃত্যু হয়। জীবদ্দশায় তিনি তেমন স্বীকৃতি না পেলেও মৃত্যুর পর হয়ে যান কিংবদন্তি।
আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক অকালমৃত্যু হয়েছে রোলিং স্টোনের লিড গিটারিস্ট ব্রায়ান জোনসের। ১৯৬৯ সালের ২ অথবা ৩ জুলাই রাতে তার নিজস্ব সুইমিং পুলের তলদেশে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর কারণও একই। মাদক গ্রহণের কারণে যকৃত অস্বাভাবিক বড় হয়ে যাওয়ায় তিনি পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন।
অভিশপ্ত ক্লাব-২৭ এর আরেক সদস্য জ্যানিস জপলিন। ইনি এমন একজন নারী যার ছিল অনেক গুলো হ্যাট, তিনি গাইতেন, গান লিখতেন, ছবি আঁকতেন, নাচতেন এবং সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজকও ছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত হেরোইন গ্রহণের কারণে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে মেঝেতেই মরে পড়ে ছিলেন। লোকমুখে শুনা যায়, তিনি অত্যধিক বিষন্নতায় ভুগতেন। তিনি ক্লাবে যোগ দেন ১৯৭০ সালের ৪ অক্টোবর।
বিখ্যাত গান ‘নো স্ট্র্যানজার টু কন্ট্রোভারসি’ এবং ‘দ্য ডোরস ফ্রন্টম্যান’ এর শিল্পী জিম মরিসন ১৯৭১ সালে প্যারিসের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাথটাবে মরে পড়ে ছিলেন। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে কাউকে সন্দেহ করা হয়নি বলে প্যারিসের আইন অনুযায়ী মৃতদেহের ময়না তদন্তও হয়নি। তবে পরে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, হেরোইন সেবনই তার কাল হয়েছিল।
শ্লেষপূর্ণ গানের কথার জন্য যে ব্যান্ডটি বিখ্যাত তার নাম নিরভানা। এই ব্যান্ডের প্রধান গায়ক কুরত কোবেইন ১৯৯৪ সালে আত্মহত্যা করেন। তিনি একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে মিয়ামি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আসেন। এর কয়েকদিন পর লেক ওয়াশিংটনের নিজ বাড়িতে তাকে একটি শটগান ও সুইসাইড নোটসহ মৃত উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, তিনি চরমভাবে মাদকাসক্ত ছিলেন। হেরোইনের প্রতি তার ছিল দুর্বার আসক্তি। নিয়মিত ঘুমের ওষুধ ভ্যালিয়ামও সেবন করতেন কোবেইন।
২০০৬ সালের নভেম্বরে এক মর্মান্তিক গুপ্তহত্যার শিকার হন ম্যাক্সিকোর গায়ক ভ্যালেন্তিন এলিসালদে। একটি কনসার্ট শেষ করে ফেরার পথে গাড়ির চালক এবং সহকারীসহ নিহত হন তিনি। তখন তার বয়স ২৭ বছর। জনশ্রুতি আছে তিনি মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার বিরোধীরা এ কাজ করে। মৃত্যু পরের বছর তিনি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন।
জনপ্রিয় শিল্পী স্টোন দ্য ক্রোস এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লেসলি হার্ভে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ১৯৭২ সালে। স্টেজে গান গাওয়ার সময় ভেজা হাতে মাইক্রোফোন ধরার কারণে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সংযোগটি আর্থিং করা ছিল না।
গ্রেটফুল ডেড ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রন পিগপেন ম্যাককারনানকে মৃত উদ্ধার করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার কোরত ম্যাদেরায় নিজ বাসভবন থেকে। ১৯৯৪ সালে ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে রক্ষিত আছে।
জোনাথন গ্রেগরি ব্যানডিস তার ক্যারিয়ার শুরু করেন আমেরিকার জনপ্রিয় দ্বিপ্রহরীক অনুষ্ঠান ওয়ান লাইফ টু লাইভে, সেটা ১৯৮২ সালে। কিন্তু মাত্র দুই দশক পরেই ২০০৩ সালে তিনি গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার বন্ধুদের দাবি, দ্য নেভার এন্ডিং স্টোরি-২ এর এই জনপ্রিয় অভিনেতা একাকিত্বে ভুগতেন এবং ক্যারিয়ার নিয়ে খুব হতাশ ছিলেন।
এতো গেলো শিল্পী আর অভিনেতাদের কথা। অভিশপ্ত ক্লাব-২৭ এ খেলোয়ারদের সংখ্যাও কম নয়।
যেমন ১৯৯৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপের কিছুদিন পরে কলম্বিয়ার ফুটবলার আনদ্রেস এসকোবার মেদেলিন শহরতলীর একটি বারের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন। বিশ্বকাপে এসকোবারের একটি আত্মঘাতী গোলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হেরে যায় কলম্বিয়া। একারণে সিরিজ থেকেই তাকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। ধারণা করা হয় তাকে গুলি করার পেছনে এটিই কারণ।
পরে জানা যায়, এসকোবারের দেহরক্ষী হামবারতো মুনোজ ক্যাস্ত্রো তাকে গুলি করে। কলম্বিয়ার একটি শক্তিশালী মাদক চোরাচালান গ্রুপের পক্ষে তিনি এ কাজ করেন। ওই গ্রুপটি বিশ্বকাপে বাজি ধরে হেরে গিয়েছিল এসকোবারের আত্মঘাতী গোলের কারণে।
বেসবল খেলোয়ার স্টিভেন অলিন ফ্লোরিডার লিটল নেলি হৃদে নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৯৯৩ সালে। ওই দুর্ঘটনায় অপর একজন খেলোয়ার নিহত এবং একজন আহত হন।
আন্দ্রিয়া আবসলোনোভা ওরফে লিয়া ডি মেই ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের একজন জনপ্রিয় অ্যাডাল্ট মডেল। ২০০৪ সালে তিনি জটিল মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার রোগ ধরা পড়ে সে বছরই জুলাইতে। এর পর মাত্র ১৭ দিনের মাথায় প্রাপ্ত বয়স্কদের চলচ্চিত্রের এ অভিনেত্রীর মৃত্যু হয়। আর মাত্র কটা দিন পরেই ছিল তার ২৮তম জন্মদিন। ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বরে তার ২৮ বছর পূর্ণ হতো।
সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে প্যাট্রিক ড্যানিয়েল টিলমানের জীবন যেনো বদলে গেলো। পেশাদার ফুটবলার থেকে তিনি হয়ে গেলেন সৈনিক। ২০০২ সালের এই দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বাহিনীতে নাম লেখান। ২০০৪ সালে তাকে আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওই বছরই ২২ এপ্রিল ফ্রেন্ডলি ফায়ারের (ভুল করে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি) কবলে পড়ে অঘোরে প্রাণ হারান টিলমান। তখন তার বয়স সবে ২৭ বছর!
ইন্টারনেট অবলম্বনে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১১