ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আত্মহত্যা নয় মুক্তির উপায়

ডা. এ বুলবুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১০

আত্মহত্যা নিজের প্রতি অবমাননাকর একটি শব্দ। অনেকের মতে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য কাজ।

প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। এজন্য প্রতিটি দেশের সরকার এবং নানা বেসরকারি সংস্থা জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ইতোপূর্বে যেমন ঘটেছে, এখনও ঘটছে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে আবার গ্রামের মেয়েরা শহরের মেয়েদের তুলনায় এই দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।

বিবাহিত মেয়েদের আত্মহত্যার ক্ষেত্রে অনেক সময় খবর রটেছে যে, তাতে পরিবার কিংবা স্বামীর ইন্ধন বা প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আত্মহত্যার ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। আগে মেয়েদের ক্ষেত্রে অধিকাংশই ইভ টিজিং, যৌতুকের চাপ, অভাব, হতাশা, পারিবারিক কিংবা সামাজিক নির্যাতনের মতো ঘটনায় আত্মহত্যার পথে এগোত। হয়তো তারা ভাবত এটাই মুক্তির একমাত্র পথ। আর ছেলেদের বেলায় প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, নেশাগ্রস্ততা কিংবা জীবনের দায়ভার নেওয়ার সাহস না থাকাটাই হয়ে দাঁড়াত আত্মহত্যার কারণ।

সাম্প্রতিককালে আমরা শুনেছি তিন গৃহবধূর সন্তান-সন্ততিসহ আত্মহত্যার ঘটনা। কেউ কেউ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। কিছু খবর আমরা পাই, কিন্তু অনেকাংশই থেকে যায় গোপন। এই অল্প পাওয়া খবরের ভিত্তিতেই উদ্বিগ্ন হতে হয়, সমাজ আজ কোন পথে চলছে? এর থেকে বের হওয়ার উপায় কি? আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায়সহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল।

ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘আত্মহত্যার এই সামাজিক ব্যাধি শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। মানুষ হিসেবে নিজেকে জানতে হবে। সামাজিক দায়িত্ববোধ, পারিবারিক দায়িত্ববোধ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনগুলো যথার্থভাবে মেনে চললেই অনেকাংশে এটা রোধ করা সম্ভব। মানুষ হিসেবে কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, যদি উপলব্ধি করেন সমাজ কিংবা পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য, তবে তার পক্ষে আত্মহত্যা সম্ভব নয়। ’

ইদানীং সন্তানসহ মায়েদের আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পারিবারিক অশান্তি, দাম্পত্য কলহ কিংবা অন্যান্য কারণে স্ত্রীরা স্বামী বা তার পরিবারের কিংবা উভয়ের ওপর ওপর জমা রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, অপ্রাপ্তি, সব কিছুই শিশু সন্তানদের সাথে শেয়ার করেন। তখন ওই শিশুরা বাবা ও সংশ্লিষ্ট সব আত্মীয়দের ওপর বিরূপ এক ধারণা নিয়ে বড় হতে থাকে। আবার মা চিন্তা করে তার মৃত্যুর পর সন্তানের কী হবে? এই ভেবে কোনো কূল না পেয়ে শেষে মায়ের মাধ্যমে প্ররোচিত হতে থাকে শিশু। এক পর্যায়ে মায়ের সাথে সাথে এই শিশুরাও জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ’

মোহিত কামাল মনে করেন, ‘আত্মহত্যা হুট করে হয় না। অনেক পরিকল্পনা করে এগোতে হয়। এ সময় আশপাশের মানুষ যদি একটু খেয়াল করে তাহলে তারা সমস্যাগুলো বুঝতে পারে। এ অবস্থায় যদি তারা উদ্যোগী হয় তাহলে বিষয়টি তখন পারিবারিকভাবে সমাধান না করা গেলেও আইনের মাধ্যমে একটা মীমাংসা করা সম্ভব হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গৃহবধূদের বাবা-মায়েরা তখন বিষয়টি আমলে নেন না, আবার কখনো কখনো নিজেরাই মেয়ের মনকে বিষিয়ে তোলেন। এভাবে তারা নিজেদের দায়ত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে শেষে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নিতে ছুটে যান। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে মেয়ের পরিবারের সদস্যদের দায়দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সংশ্লিষ্ট আইনে থাকা উচিত। ’

তিনি আরো বলেন, ‘এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অনেক ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। যৌতুক, গৃহনির্যাতন, বহুবিবাহ সম্পর্কিত খবর ও এগুলোর কুফলের পাশাপাশি আত্মহত্যার পথে না গিয়ে বিকল্প পথে জীবন গঠনের উপায় নিয়ে বেশি বেশি সংবাদ প্রকাশিত হওয়া দরকার। তাহলে তা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারবে। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২০৭, আগস্ট ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।