ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লন্ডন

ভিসা জটিলতা

অনিশ্চিত বাংলাদেশি ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের হজযাত্রা

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪
অনিশ্চিত বাংলাদেশি ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের হজযাত্রা

লন্ডন: ভিসা জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের হজযাত্রা।

শুধু বাংলাদেশিই নন, ব্রিটিশ নাগরিক নন পাকিস্তান, ভারতসহ অন্যান্য দেশের এমন ব্রিটিশ রেসিডেন্টরাও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

এবার আদৌ তাদের হজে যাওয়া হবে কিনা, এমন দুঃশ্চিন্তায় এখন কাটছে তাদের নির্ঘুম রাত।

বিগত মাস পাঁচেক আগে লন্ডনের সৌদি দূতাবাস তাদের অনুমোদনকরা হজ এজেন্টদের সাফ জানিয়ে দেয়, ডিজিটাল পাসপোর্ট ছাড়া তারা আর কোনো ভিসা ইস্যু করবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকেও জানানো হয়, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে।

সে মতে, বিষয়টি নজরে রেখেই এজেন্টগুলো এবার হজে যেতে ইচ্ছুক ক্লায়েন্টদের হজ গমনের আবেদন গ্রহণ করে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ভিসা সম্বলিত পাসপোর্ট গ্রহণ করতে এসে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের ডিজিটাল পাসপোর্টধারী ব্রিটিশ রেসিডেন্টরা জানতে পারেন, তাদের হজ ভিসা ইস্যু হয়নি।

ব্রিটেনের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন শহর থেকে ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ে লন্ডন এসে আটকা পড়েন এমন বেশ কয়েক জন হজযাত্রী।

বাংলানিউজের কাছে তারা অভিযোগ করেন, তাদের হজ যাত্রার সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে বার বার তাদের এজেন্টদের এমন প্রশ্ন করেছেন তারা। প্রতিবারই ইতিবাচক উত্তর পেয়েছেন তারা। অথচ লন্ডনে এসে দেখেন, তাদের ভিসা ইস্যু হয়নি। কখন হবে, আদৌ হবে কিনা, এমন কোনো উত্তরও এখন পাচ্ছেন না এজেন্টদের কাছ থেকে।

লন্ডন থেকে ২৭০ মাইল দূরবর্তী হার্টলিপুল থেকে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে এবার হজে যাবেন হিলাল সাইফ। সোমবার লন্ডন থেকে তার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নির্ধারিত সময় এজেন্টের কাছ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারেন, তার মায়ের ভিসা হয়নি। মাকে নিয়ে হজ করবেন দীর্ঘদিন ধরে যে স্বপ্ন দেখছিলেন হিলাল, মায়ের হজ ভিসা হয়নি জেনে তার স্বপ্ন যেন নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়।

উপায়ান্তর না পেয়ে হিলাল ফোন করেন বাংলানিউজের কাছে, মায়ের ভিসা পেতে কী সমস্যা, সে বিষয় কোনো খোঁজ নেওয়া যায় কিনা!

হিলাল জানান, তার নিজের পাসপোর্ট ব্রিটিশ। তার ভিসা হয়েছে। কিন্তু তার মায়ের ভিসা হয়নি। শুধু তার মা’ই নন, অন্যান্য দেশের পাসপোর্টধারী ব্রিটিশ রেসিডেন্টদেরও একই অবস্থা বলে জানান তিনি।

হিলালের পর আরো অনেক ভুক্তভোগীই একই অভিযোগ জানিয়ে ফোন করেন। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খামখেয়ালির কারণেই এমন অবস্থা।
HAJJ_VISA1
সম্প্রতি, সৌদি সরকার হজ ভিসা সিস্টেম আপগ্রেড করতে গিয়ে খামখেয়ালির কারণেই এমন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি সরকার প্রতিটি দেশের নাগরিকদের জন্য আলাদা আলাদা সিস্টেমে কম্পিউটারাইজড করেছে হজ ভিসা প্রক্রিয়া। লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশের সৌদি দূতাবাস, সৌদি আরাবিয়ান এয়ারলাইন্স ও তাদের অনুমোদিত প্রতিটি এজেন্ট অফিসে বসানো হয়েছে পাসপোর্ট রিডার মেশিন।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টগুলো এই মেশিনে স্পর্শ করলেই ভিসা প্রার্থী ব্যক্তির সব তথ্য সঙ্গে সঙ্গেই সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জমা হয়। এই তথ্য দেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা ইস্যু করে।

সমস্যা হলো, এই সিস্টেম আপগ্রেড করতে গিয়ে প্রতিটি দেশের নাগরিকদের যার যার দেশ থেকে ভিসা প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক যে অন্য দেশের রেসিডেন্ট হয়ে সেখান থেকে ভিসার আবেদন করতে পারেন, এমন সিস্টেম রাখা হয়নি আপগ্রেডে।

লন্ডনের নেতৃস্থানীয় হজ এজেন্ট সিলেট হাউস ট্রাভেলস সার্ভিসের অন্যতম কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের ব্রিটিশ রেসিডন্টদের হজ ভিসা প্রাপ্তিতে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, এটি একটি টেকনিক্যাল সমস্যা। ভিসা সিস্টেম আপগ্রেড করতে গিয়েই সম্ভবত খামখেয়ালির কারণেই এটি হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল ছাড়া এখন আর হাতে লেখা পাসপোর্টে কোনো ভিসা ইস্যু হবে না, সৌদি দূতাবাস থেকে কয়েক মাস আগেই এটি আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই-ই নয়, সৌদি সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত সব এজেন্টদেরকে পাসপোর্ট রিডার মেশিন সংযুক্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। সুতরাং পাসপোর্ট যদি ডিজিটাল হয়, তাহলে ভিসা অবশ্যই হবে।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ নাগরিক না হয়েও যে দেশটির রেসিডেন্ট হওয়া যায়, এমনটি মাথায় না রেখেই ভিসা সেকশনের এই আপগ্রেড করায় নতুন এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের পাসপোর্ট তথ্য যখন সৌদি দূতাবাস থেকে মেশিন মারফত তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, তখন টেকনিক্যাল কারণে সেখানে এটি সংশ্লিষ্ট দেশের হজ ভিসা প্রার্থীদের তালিকায় গিয়ে সংযুক্ত হচ্ছে।

এই ভিসা প্রার্থীদের সেইসব দেশের হজযাত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তারা নিজে এমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি জানিয়ে শাহজাহান বলেন, সমস্যাটি সাময়িক। সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে।

আশা করি, সোমবারের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি এই সমস্যার সম্মুখীন হজযাত্রীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন।

এ সমস্যার কথা সৌদি দূতাবাস কি আগে তাদের জানায়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহজাহান ‘না’ সূচক জবাব দেন।

তিনি বলেন, সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারাই হয়ত এই জটিলতার বিষয়টি আগে জানেননি।

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে লন্ডনের সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে এক কর্মকর্তা বিস্তারিত কিছু না বলে সমস্যাটি ‘সাময়িক’ বলে মন্তব্য করেন।

বাংলানিউজকে আশ্বস্ত করে তিনি জানান সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৩ অথবা ৪ অক্টোবর হজ পালিত হবে সৌদি আরবে। ইতোমধ্যে, ব্রিটেন থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এই ফ্লাইট চলবে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সুতরাং এর আগেই যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিক ব্রিটিশ রেসিডেন্ট হজযাত্রীদের ভিসা জটিলতার সমাধান হয়, এমন দাবি জানিয়েছেন সমস্যার সম্মুখীন হজ গমনেচ্ছুরা।

তারা বলছেন, ভিসা সমস্যার সমাধান হওয়ার পর ফ্লাইটে যাতে সিট সমস্যা না হয়, এটির দায়িত্বও নিতে হবে সৌদি সরকারকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ