ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

ব্রাসিলিয়া থেকে সৈয়দ আনাস পাশা

বাঙালিরা আইন ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
বাঙালিরা আইন ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্রাসিলিয়া, ব্রাজিল থেকে: বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ব্রাজিলিয়ানদের একটি ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। তারা মনে করেন বাংলাদেশিরা খুবই শান্তিপ্রিয়, আইন মেনে চলা মানুষ।

এরা কেউ কখনও বেআইনি কোনো কার্যক্রম বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়না।

ব্রাজিলে বসবাসরত ছোট কমিউনিটি বাংলাদেশিদের সম্পর্কে নিজের এমন ধারণার কথা বাংলানিউজকে জানালেন ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (আইএমএইচআর) পরিচালক অভিবাসী কমিউনিটির ‘মা’ খ্যাত রসিডা মিলেচি।

ব্রাজিলের অভিবাসী কমিউনিটির সুখ-দুঃখের সাথী সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ এ নারীকে সবাই ‘মা’ বলেই সম্বোধন করেন।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) ব্রাসিলিয়ায় তার অফিসে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন রসিডা মিলেচি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ নিউজ পোর্টাল এমনটি শুনে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে কথা শুরু করেন তিনি। এসময় ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আগমন, কঠিন সময় পার, বৈধতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথার ঝুড়ি তিনি খুলে বসেন।

মিলেচি বলেন, এই কিছুদিন আগেও কঠিন সময় পার করেছেন ব্রাজিলে আসা বাংলাদেশিরা। দালালের খপ্পরে পড়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়াই ব্রাজিলে ঢুকে পড়ায় বেশ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাদের।

তার সংগঠন আইএমএইচআর এই অসহায় বাংলাদেশিদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো- বাংলানিউজকে এমন তথ্য দিতে গিয়ে মিলেচি বলেন, শুধুমাত্র রাজধানী ব্রাসিলিয়ায়ই ২০১২ সালে ১৩২ জন, ২০১৩’তে ৬৫২ এবং ২০১৪ সালে ৪৯ জন বাংলাদেশিকে আইএমআইচআর সহযোগিতা করেছে। যারা মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন এখানে।

এ সময় এদের রিফিউজি ডকুমেন্ট তৈরি থেকে শুরু করে খাওয়া-থাকা সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে আইএমএইচআর।

২০১৩ সাল বাংলাদেশিদের জন্যে সবচেয়ে কঠিন সময় ছিলো এমনটি মন্তব্য করে প্রতিষ্ঠানটির ডাইরেক্টর বলেন, ওই সময়টায়ই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি ব্রাজিলে ঢুকেছে, যাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছিলোনা। এরপর এই সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে।

সংখ্যা কমার মানে কি এখন আর বাংলাদেশিরা ব্রাজিল আসতে চায়না?- বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে মিলেচি বলেন, না, আমার তা মনে হয়না। আমার মনে হয় সংখ্যা কমার কারণ হলো মানবপাচারকারী দালালদের উপর ফেডারেল পুলিশের নজরদারি। ২০১৩ সালে এত বেশি সংখ্যক বাংলাদেশির ব্রাজিল আসার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ফেডারেল পুলিশ তখন জানতে পারে এক শ্রেণির দালাল অর্থের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশিদের ব্রাজিলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ঢুকিয়ে দেওয়ার পর এদের আর কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেনা। এক বাসায় ২৫ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত মানুষ গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করেছে।

এদের না আছে কোনো রিফিউজি ডকুমেন্ট, না আছে কোনো কাজ। দালালের মাধ্যমে এরা দুবাই, বলিভিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ হয়ে ব্রাজিলের সাওপাওলো-ব্রাসিলিয়াসহ অন্যান্য শহরে ঢুকে। ব্রাজিলের সামামবাইয়া শহরে ছিলোএদের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি।

মিলেচি বলেন, দালালদের এই সব অপতৎপরতা রোধে পুলিশি অভিযান শুরু হওয়ার পরই আমার ধারণা বাংলাদেশিদের আগমনের সংখ্যা এখন কমে গেছে।

বাংলাদেশ বিপুল জনসম্পদের একটি দেশ। এই দেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করলে ব্রাজিল লাভবান হবে জানিয়ে, এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা সিডা মিলেচি’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালে ব্রাজিলের সামামবাইয়া ডিস্ট্রিক্টে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উপর করা আমাদের একটি সার্ভে ব্রাজিলের উন্নয়নে তাদের সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘রিফিউজি, মাইগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপ’ নামে একটি প্রকাশনা এই প্রতিবেদকের হাতে তুলে দিয়ে মিলেচি বলেন, বাংলাদেশি শ্রমশক্তির উপর সার্ভে করা ওই রিপোর্ট এই প্রকাশনায় আছে।

প্রকাশনায় সামামবাইয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের উপর পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্রাজিলের মিশ্র কমিউনিটিকে খুব সহজেই মানিয়ে নেওয়ার মত ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশিদের।

এর অন্যতম কারণ হলো কাজের সুযোগে দারিদ্রের কারণে এরা দেশ থেকে বের হয়ে এসেছে। বিভিন্ন দেশ ঘুরে ব্রাজিলে ঢুকেছে বিধায় আগের অভিবাসন অভিজ্ঞতাও আছে এদের। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়, ইন্ডাস্ট্রি সেক্টরে ব্রাজিলে অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন বিধায় এই জনগোষ্ঠিকে রিফিউজি ডকুমেন্ট দিয়ে অবিলম্বে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

ব্রাসিলিয়া বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্যা এফেয়ার্স নাহিদা রহমান সুমনার সঙ্গে সাক্ষাতেও রসিডা মিলেচি বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেন বলে সুমনা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ব্রাজিলিয়ানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্রী অভিবাসী কমিউনিটির ‘মা’ খ্যাত মিলেচি যখন বাংলাদেশিদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করছিলেন তখন আমারও বুকটা গর্বে ভরে উঠছিলো। তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা আমার সঙ্গে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে কথা বলেন।

ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশি, যাদের স্থায়ী বসবাসের তখনও কোনো সুযোগ হয়নি, তাদের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন মিলেচি। স্থায়ী বসবাসের সুযোগ যাতে বাংলাদেশিরা পায় তার জন্যে সবধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।

সুমনা আরও বলেন, তার এই সহযোগিতার আশ্বাস শুধু আশ্বাসই থাকেনি, বাস্তবও হয়েছে। আইএমএইচআর’র সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭২০জন বাংলাদেশি ব্রাজিলে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।

ব্রাজিলে বাংলাদেশিদের সংখ্যা কেমন হবে এমনটি জানতে চাইলে বর্তমানে চার্জ দ্যা এফেয়ার্সের দায়িত্ব পালনরত নাহিদা রহমান সুমনা বলেন, ইমিগ্রেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ব্রাজিলের ২০১০-১৩ সার্ভে মতে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশির বসবাস ব্রাজিলে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ বৈধভাবে বসবাস করছেন, বাকী ৫০ শতাংশও বৈধতার পথে। ব্রাজিলের অন্যতম বড় শহর সাওপাওলোতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বসবাস বলে বলেন নাহিদা। মূলত পল্টি প্রসেসিং প্লান্টেই অধিকাংশ বাংলাদেশি কাজ করেন এমন মন্তব্য করে চার্জ দ্যা এফেয়ার্স জানান, কিছু কিছু বাংলাদেশি নিজেরাই ছোট বিজনেস খুলে বসেছেন, কেউ কেউ কাজ করছেন পেইন্টিং, দোকান কর্মচারী হিসেবে।

দূতাবাসের সঙ্গে বাংলাদেশিদের যোগাযোগ কেমন- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ব্রাজিলে দায়িত্ব পালনরত এই কূটনীতিক জানান, দূতাবাস এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে। তাদের সুবিধা অসুবিধায় পাশে থাকার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ