ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও দেশটিতে যেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।
এর আগে মাত্র ২৭ থেকে ৩৩ হাজার টাকায় সরকারিভাবে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানো হয়। কিন্তু সেই একই দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রিক্রুটিং ।
এজেন্সিগুলোর দাবি, এরইমধ্যে তারা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিসা কেনার বিষয়ে আলাপ সেরে ফেলেছে। আগাম টাকাও দিয়েছে অনেকে। দুই সরকারের মধ্যে আনু্ষ্ঠানিকতা শেষ হলেই শুরু হবে ভিসা আনা এবং শ্রমিক পাঠানো পর্ব।
এদিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর পদ্ধতিসহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা চূড়ান্ত করতে গত ২৯ জুলাই মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল আসার কথা থাকলেও আগামী ৯ আগস্ট ঢাকা আসছে তারা। নীতিমালা চূড়ান্তের পর রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই শ্রমিক পাঠানো শুরু হতে পারে।
কার্যত মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খোলার খবরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। তারা শ্রমিক প্রতি আড়াই লাখ থেকে শুরু করে তিন/চার লাখ টাকা করেও দাবি করছে।
সাতক্ষীরা জেলার আশাশনি থানার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দাউদ নামে একজন স্থানীয় দালাল মালয়েশিয়ার ভিসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। ভিসা পাওয়ার পর আরো দুই লাখ টাকা দিতে হবে।
তবে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু নুরুল ইসলাম ‘ভিসা না দিতে পারে এমন শঙ্কায়’ অগ্রীম টাকা নেওয়া এই রিক্রুটিং এজেন্সির নাম বলতে রাজি হননি।
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ২০১৩ সালে সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছিল সারা দেশে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে মাত্র আট হাজার শ্রমিক দেশটিতে যেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবার বেসরকারিভাবে কর্মী গেলেও নিবন্ধিত কর্মী থেকেই মালয়েশিয়া পাঠানো হবে। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা নিবন্ধনের বাইরে কোনো কর্মী পাঠাতে পারবেন না।
তবে সে নির্দেশনার কেয়ার না করে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো শ্রমিক সংগ্রহে নেমেছেন। ফলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়ার বিষয়টি এখন ‘বেশি টাকায় অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতেই হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে শ্রমিকদের ভিসা সংগ্রহ করতে হওয়ায় এই অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গ্রীনল্যান্ড ওভারসীজের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবদুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, মালয়েশিয়া যেতে অভিবাসন খরচ কমই হবে। সরকারি খরচের চেয়ে তো অবশ্যই কম।
সেই ‘কম’ পরিমাণটা কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ২৭ থেকে ৩৩ হাজার টাকা খরচের কথা বললেও মূলত শ্রমিক প্রতি খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা, যা মিডিয়ায় আসেনি। বেসরকারিভাবে তার চেয়ে কম খরচে শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে। দুই লাখের মধ্যেই থাকবে এই খরচ।
তবে বায়রা সভাপতি আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার এই খরচ এক লক্ষ টাকার বেশি হবে না বলে আশা করছি।
যদিও তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অভিবাসন মূল্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অধিক হারে শ্রমিক পাঠানো। এদেশের মানুষ বিদেশ যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। অর্থ বেশি দিয়ে হলেও তারা বিদেশে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চায়।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বাংলানিউজকে বলেন, জনশক্তি রপ্তানিকারকরা যেন অতিরিক্ত অভিবাসনমূল্য না নিতে পারে ব্যবস্থা করা হবে। তাদের খরচ ও লাভ বিবেচনা করে মালয়েশিয়ার জন্য অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে দেশটির প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে চুক্তিটি সম্পন্ন করার পরই সেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানেও সেখানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি কাজ করছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কার এবং সাগরপথে মানুষের দুর্দশা নিয়ে হইচই শুরুর পর আবার বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৫
জেপি/জেডএম