কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ থেকে এসে কৃষিতে বিদেশের মাটিতেও যে ভালো করা সম্ভব তা প্রমাণ করছে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলদেশিরা। মালয়েশিয়ার শীতপ্রধান অঞ্চল ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে বাঙালি শ্রমিকেরা কৃষিকাজে সফল আগে থেকেই।
![ঝুলছে করলা](http://cdn.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/sabji-220171206202513.jpg)
ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে সব সময় শীতল আবহাওয়া হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার কপি, টমেটোর ফলন হয়, যা দেশের অন্য অঞ্চলে হয় না। সঙ্গে অন্য সবজিও ভালো ফলে। পুরো মালয়েশিয়ার সবজির চাহিদার বড় অংশ মেটায় ক্যামেরুন হাইল্যান্ড। সেখানে সফলতা দেখে দেশটির অন্য অঞ্চলেও বাড়ছে বাংলাদেশিদের শাক-সবজি চাষ। বাড়ছে কৃষিতে বিনিয়োগ।
মালয়েশিয়ায় পতিত জমির অভাব নেই। অনেক সময় সরকারের কাছ থেকে আবার অনেক সময় ব্যক্তি মালিকানার জায়গা নামমাত্র টাকায় কয়েক বছরের জন্য চুক্তিতে নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু কারা কীভাবে যুক্ত হচ্ছেন এ ব্যবসায়? এনিয়ে কথা হয় জোহর বারুর বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা এমএ আহমেদ, মালাক্কার ব্যবসায়ী রহিম, সেলিম, গফুর, হালিম প্রমুখের সঙ্গে।
![মাচায় ধুন্ধল](http://cdn.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Sabji-320171206202551.jpg)
তারা ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের সফলতার কথা তুলে ধরে দেশের অন্য প্রান্তে চাষাবাদ বাড়ার কথা জানান। একইসঙ্গে এ সেক্টরে যে চীনারা সংখ্যালঘু হচ্ছে তা কয়েকটি বাগান পরিদর্শনেও জানা যায়।
ব্যবসায়ী সেলিম ১৮০ বিঘা ও আব্দুল হালিম ৬৩ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করছেন। দুজনই মালয়েশিয়ার মালাক্কায় আছেন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে। মালয় নারী বিয়ে করে দুজনই এদেশের নাগরিক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাগরিক হলে এ ব্যবসায় আসা সহজ। অনেকে আবার এদেশের কারও নামে লিজ নিয়ে চাষ করছেন। তবে তারা কলিং ভিসায় আসেননি। যারা রয়েছেন আরও আগে থেকে। আবার কেউ চাইলে ব্যবসায়িক ভিসা কিংবা সেকেন্ড হোমের আবেদন করেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সেকেন্ড হোমের জন্য বয়স ৪০ এর বেশি হলে এক লাখ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত=২০ টাকা) ডিপোজিট রাখতে হয় মালয়েশীয় সরকারের কাছে। আর বয়স এর কম হলে তিন লাখ। কলিং ভিসায় এলে সে কাজ নিয়ে আসবে তাকে সে কাজেই করতে হবে। নইলে সে অবৈধ হয়ে যাবে।
![সবজি তুলছেন হালিমের ভাই গফুর](http://cdn.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Sabji-420171206202634.jpg)
মালয়েশিয়ার সবচেয়ে ঐতিহাসিক স্থান মালাক্কা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সব সময় ছিল বিখ্যাত। বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ, ওলন্দাজ, পর্তুগিজরা এলাকাটি দখল করে বাণিজ্য করেছে। পালতোলা জাহাজের যুগেও মালাক্কা প্রণালী ও সমুদ্রবন্দর ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আগের সে জৌলুশ কিছুটা কমলেও ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও এখানে জমজমাট।
মালাক্কার শত শত একর জমিতে এখন সবজি চাষ করছেন বাংলাদেশিরা। ফলন বেশি এবং সারাবছর সমান ফলন পাওয়ায় লাভ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। আবহাওয়াগত কারণে এখানে চাষাবাদ অনেক সহজ। সারাবছর আবহাওয়া না গরম না শীত, আবার বর্ষা হওয়ায় চাষ করা সহজ। ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকরাও অধিকাংশ বাংলাদেশি। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকার কৃষিতে জোর দেওয়ায় এ সেক্টরে লোক পাওয়া সহজ।
![আখক্ষেত্র](http://cdn.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Sabji-520171206202724.jpg)
চাষিরা জানান, জঙ্গল কেটে জমি তৈরি করাই এখানে প্রধান খরচ। প্রতি বিঘা বছরপ্রতি ২-৩শ রিঙ্গিতে লিজ পাওয়া যায়। অনেক সময় আরও কম। এরপর জমি তৈরি করতে হয় একটু উঁচু করে মাঝে পানি সরার পথ রেখে। ২০ একর জায়গা তৈরি করতে খরচ হয় ২ লাখ রিঙ্গিত বা এর সামান্য কমবেশি। আয় আসা শুরু হয় মাস চারেক পর থেকে।
তবে সেলিম ও হালিম জানান, তারা শুরু করেছেন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ রিঙ্গিত বিনিয়োগে তারা ব্যবসা শুরু করেছেন। এখন মাস ঘুরলেই কয়েক লাখ টাকা বেচাবিক্রি হয়, লাভ থাকে। আর খরচ বলতে শ্রমিকদের বেতন আর সামান্য সার, কীটনাশক, বীজ কেনা। এখানে কীটনাশক বেশি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হঠাৎ হাজির হয় সরকারি লোক। ধরা পড়লেই জরিমানা, লিজ বাতিল। সারের ক্ষেত্রেও জৈব সার ব্যবহার বেশি।
![তুলে রাখা সবজি পাইকারি ক্রেতার অপেক্ষায়](http://cdn.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Sabji-620171206202802.jpg)
আর যে জমিতে ঢেঁড়শ লাগানো হবে তাতে ফি-বার দিতে হবে অন্য ফসল। এভাবে প্রতিটি ক্ষেতই ঘুরবে। সবজির সঙ্গে আখ, লেবু এসবের চাষও হচ্ছে। মালাক্কার শিল্প এলাকা আইসলে, আই বাবাস, মাছিতানা, সিলানবাও প্রভৃতি এলাকার পতিত জমি এখন সবুজ সবজিতে ভরপুর।
![আব্দুল হালিমের ক্ষেত](http://cdn.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/Sabji-720171206202853.jpg)
সেলিম জানান, ৭২ বিঘা জমির সবজি একদিনে তিনি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার রিঙ্গিতে। তার পরামর্শ, কেউ এ ব্যবসায় নামলে একবারে অনেক বিনিয়োগ না করে অল্প অল্প করে বাড়ানো ভালো।
এদেশের সবজির সঙ্গে বাংলাদেশের লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাকও ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখানে। মালয়েশিয়ার মাটিতে বাংলাদেশিদের এ সাফল্য অন্যদেরও বিনিযোগে আগ্রহী করে তুলছে।
আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
বুকিত বিনতাংয়ের দরজাহীন ২৪ ঘণ্টার রেস্টুরেন্ট
পা বাড়ালেই সিঙ্গাপুর
হীরায় মোড়া রাজার মুকুট!
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৭
এএ