ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শেখ হাসিনার অপেক্ষায় চট্টগ্রাম, স্মরণকালের বড় সমাবেশের প্রস্তুতি

মহিউদ্দিন মাহমুদ ও মিনহাজুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২২
শেখ হাসিনার অপেক্ষায় চট্টগ্রাম, স্মরণকালের বড় সমাবেশের প্রস্তুতি ছবি: ‍উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম থেকে: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার আগমন ও নগরীর পলোগ্রাউন্ডের জনসভাকে কেন্দ্র করে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এখন উৎসবের নগরী। শেখ হাসিনাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে পলোগ্রাউন্ড ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, আগামী রোববারের (৪ ডিসেম্বর) জনসভাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌকা প্রতিকৃতির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বিরাট জনসভার মঞ্চ। বাঁশের বেরিকেড দিয়ে কয়েক স্তরে ভাগ করা হয়েছে জনসভা মাঠকে। মঞ্চ ও মঞ্চের আশপাশের ব্লকগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আগামী রোববারের জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রামে অবস্থান করে কাজ করে যাচ্ছেন।

গত সপ্তাহে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের জনসভা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর-দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার ও পরবর্তী মাসগুলোতে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।

শুক্রবার ও শনিবার (২ ও ৩ ডিসেম্বর) নগরীর জামাল খান, কাজির দেউরি, হালিশহর, লালখান বাজার, টাইগারপাস, দেওয়ান হাট, কদমতলী, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পলোগ্রাউন্ড ময়দানে বিপুল জনসমাগম নিশ্চিত করতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে করে অলিতে-গলিতে চলছে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, খোলা ট্রাকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে শেখ হাসিনার আগমণের বার্তা জানানোর পাশাপাশি জনসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে নগরবাসীকে।

শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বন্দরনগরীর অলি-গলি, রাজপথ। সড়কগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। রাতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।

জনসভার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি মাইকিং, ব্যানার-ফেস্টুন, লিফলেটে তুলে ধরা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার নানা উন্নয়নের চিত্র।

শনিবার দুপুরে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা জনসভাস্থল পলোগ্রাউন্ড ময়দান পরিদর্শন করেন।

পলোগ্রাউন্ড পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, আগামী রোববার ঐতিহাসিক চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড ময়দানে ঐতিহাসিক স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। করোনা উত্তর এ জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে। এ জনসভা স্মরণকালের ঐতিহাসিক জনসভা হবে। এ জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ বলেন, এ জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগরের সবখানে সর্বস্তরে মানুষের মধ্যে একটা আবেগ- উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের এ জনসভায় বক্তব্য দেবেন। সেটা দেখার জন্য, জানার জন্য, ওনি যে দেশবাসীর জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন সেটার জন্য চট্টগ্রামবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

এর আগে সকালে পলোগ্রাউন্ড ময়দানের জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সার্বিক প্রস্তুতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। আমরা যেটি ধারণা করছি, মাঠে যা মানুষ থাকবে তার ৮-১০ গুণ মানুষ মাঠের বাইরে থাকবে। বাস্তবিক অর্থেই এটি হবে কারণ মানুষের এত উৎসাহ-উদ্দীপনা। আমরা সেভাবে সাড়া দেখতে পাচ্ছি।

এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আগামী রোববার চট্টগ্রাম শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া পলোগ্রাউন্ড মাঠে চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। গোটা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সাদা পোশাকে নজরদারি করছে বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারা।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, উন্নয়ন ও দিন বদলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে এবং তার মুখে আগামীর বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ইয়াসির আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে বহু উন্নয়ন দেখেছি।

টানা বিগত তিন মেয়াদে চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে চট্টগ্রামকে প্রকৃত অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি দেয়। সে লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে।

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, মহেশখালী ইকোনমিক জোন, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্লাইওভার ও চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল প্রকল্প অন্যতম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
এমইউএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।