ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অনলাইন জুয়ায় হাজার কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৯

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
অনলাইন জুয়ায় হাজার কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৯

গাজীপুর: অনলাইনে জুয়া খেলে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ৯ যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

বুধবার গাজীপুর সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন—মো. নাসির মৃধা (৩০), মো. মারুফ হাসান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম রসুল (২২), মো. আশিকুর রহমান আশিক (২৭), মো. কাউসার হোসেন (২৩), মো. রুবেল হোসেন (২৫), মো. আশিকুল হক (২৫), মো. আকরাম হোসেন রিপন (২৬) ও মো. মুরাদ হাসান (২৫)।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন জানান, বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম ভেল্কি.লাইভ (সাবেক নাম নাইন উইকেটস)। ওয়েবসাইট ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে যুবকদের আসক্ত করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। গ্রেফতারদের মোবাইল ও ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এতে জানা যায়, তারা মালোয়েশিয়া/দুবাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস একাউন্ট খুলে পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করতেন। সার্ভারটি প্রধানত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ভেল্কি.লাইভের অ্যাডমিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুবাই প্রবাসী আকাশ মালিক রনি। তিনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশের ৫টি লেয়ারে তথা অ্যাডমিন, সাইট সাব-অ্যাডমিন, সুপার এজেন্ট, মাস্টার এজেন্ট ও ইউজার লেয়ারে বিভক্ত করেন। প্রতিটি লেয়ার তার উপরের লেয়ারের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। তার মধ্যে একজন রুট লেবেলের আগ্রহী অনলাইন জুয়াড়ি।

উপপুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ক্লিক করলেই এক হাজার টাকার বিপরীতে ১০টি ডিজিটাল কয়েন দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। এই ডিজিটাল কয়েন লেনদেন মূলত সারা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ফুটবল লীগ, টেনিস এবং বর্তমানে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার মাধ্যমেও প্রধানত অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। ব্যবহারকারী জয়ী হলে ডিজিটাল কয়েন ফেরত নিয়ে এর বিপরীতে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে থাকেন। হারলে তার পুরো ডিজিটাল কয়েনটাই পর্যায়ক্রমে জুয়া পরিচালনাকারীর কাছে জমা হয়ে যায়। ভেল্কি.লাইভের সাইটে ১ জন অ্যাডমিন, ১৪ জন সাইট সাব-অ্যাডমিন, ২৪০ জন সুপার এজেন্ট, দেড় হাজারের বেশি মাস্টার এজেন্ট এবং সারা দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক ইউজার রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রথমে মাস্টার এজেন্ট নাসির গ্রেফতার হলে তার দেওয়া তথ্য, ব্যবহৃত মোবাইলের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং ও এমএফএস যাচাই করে দেখা যায়, তিনি রুট লেবেলের প্রায় ৭০ জন ব্যবহারকারীর দৈনিক লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন সুপার এজেন্ট মারুফকে দিতেন। মারুফকে গ্রেফতারের জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হলে তার সঙ্গে আরও ৭ জনেরও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল, মেসেঞ্জার, হোয়টাসএ্যাপ চ্যাটিং যাচাই করে দেখা যায় যে, মারুফের ঊর্ধ্বতন সাইট সাব-অ্যাডমিন আশিকুল হকের একটি এজেন্ট ব্যাংকের ১৪৮টি একাউন্টে গত নভেম্বর মাসে ২ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০০টি মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে ১ মাসেই ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। ফলে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং সিআইডি কর্তৃক মানি লন্ডারিং আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
আরএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।