ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিশুটি বাসায় ফিরে দেখে ঝুলে আছে মা, বিছানায় মৃত ভাই-বোন

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
শিশুটি বাসায় ফিরে দেখে ঝুলে আছে মা, বিছানায় মৃত ভাই-বোন ঘটনাস্থল থেকে মা ও ছেলের লাশ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ ও বাবার কোলে শিশু সাদিয়া

ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগ থানার রায়েরবাজার এলাকায় একটি বাসায় সিয়াম হোসেন ও সাদিয়া হোসেন ছোয়া নামে দুই শিশু সন্তানকে হত্যার পর স্ত্রী হাসিনা বেগমের আত্মহত্যার কোনো কারণে খুঁজে পাচ্ছেন না সন্তানদের বাবা সাদ্দাম হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে বড় ছেলে সালমান হোসেন কোচিং থেকে ফিরে এসে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে মা, মা বলে ডাকতে থাকে।

ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে, বাড়িওয়ালা ও অন্যদের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে দেখে, তার মা গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। পাশাপাশি ছোট দুই ভাই-বোন অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে বিছানায়।

খবর পেয়ে বাসায় গিয়ে শিশু সাদিয়া বেঁচে আছে ভেবে তার বাবা গাড়ি চালক সাদ্দাম হোসেন তাকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হাসিনা ও শিশু সিয়ামের মরদেহ উদ্ধার করে।

সাদ্দাম হোসেন জানান, তিনি হাজারীবাগ রায়েরবাজার গদিঘর এলাকায় একটি তিনতলা বাসার তৃতীয়তলায় স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকেন। নিজে রেন্ট-এ-কারের গাড়ি চালান। স্ত্রী হাসিনা বেগম ছিলেন গৃহিণী।

তিনি আরও জানান, বড় ছেলে সালমান হোসেন (৮) একটি স্কুলে ২য় শ্রেণিতে পড়ে। সাদিয়ার বয়স সাড়ে তিন বছর ও সিয়ামের বয়স ৭ মাস।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, সন্ধ্যার দিকে পাশের ভাড়াটিয়াদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখি, স্ত্রী হাসিনা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে আর দুই সন্তান বেডে পড়ে আছে। ঘটনার সময় বড় ছেলে সালমান কোচিং সেন্টারে ছিলো। এসময় শিশু সন্তান সাদিয়া নড়াচড়া করছিল ভেবে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।  

তার ধারণা, দুই সন্তানকে হত্যা করে তাদের মা আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরও জানান, ছোট ছেলে সিয়ামের শুধু ঠাণ্ডা লাগে। বিষয়টি নিয়ে বিকেলে স্ত্রী হাসিনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার। এরপর বড় ছেলের অনুরোধে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় খবর পেয়ে বাসায় আসেন।  

কিন্তু সাদ্দাম হোসেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না যে, ওই ঝগড়াঝাঁটির কারণেই তার স্ত্রী দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবে।

ওই বাড়ির মালিক রমজান আলী জানান, গত ১ অক্টোবরে দুই রুম ১২ হাজার টাকায় তারা ভাড়া নেয়। পরে সাদ্দাম হোসেন এক রুম সাবলেট ভাড়া দেয়। সন্ধ্যার দিকে তার বড় ছেলে সালমান বাসায় এসে মা মা বলে ডাকলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ ছিলো না। পরে অন্যদের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে দেখা যায়, হাসিনা গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। আর তার দুই শিশু সন্তান মৃত অবস্থায় খাটে পড়ে আছে।

হাজারীবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হুদা জানান, হাজারীবাগ গদিঘর এলাকার একটি বাসা থেকে ২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আরেক শিশু ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে মারা গেছে।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, শিশু দুটির মা হাসিনা বেগম তাদেরকে গলাটিপে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছে।  

এসআই নাজমুল হুদা বলেন, তবে হত্যার আগে তাদের মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল কিনা, সেসবকিছুই তদন্ত করা হচ্ছে। ওই বাসাটি দুই রুমের। তারা একটি রুমে ভাড়া থাকতো।

তিনি জানান, বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে হাসিনা ও তার ছেলে সিয়ামের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য। এছাড়া শিশু সাদিয়ার মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে আছে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাদ্দামদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচড় থানার চড়বাচামার গ্রামে। আর হাসিনা বেগমের বাড়ি শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলা এলাকায়।

আরও পড়ুন: দুই সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
এজেডএস/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।