ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুক্ত হয় কুষ্টিয়া

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুক্ত হয় কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া: আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে কুষ্টিয়াকে হানাদার মুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২২টি যুদ্ধ শেষে ১১ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় বৃহত্তর কুষ্টিয়া। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী কুষ্টিয়া শহর দখলে নিতে কুষ্টিয়া শহরতলী চৌড়হাসে পৌঁছালে পাকিস্তান বাহিনীর এ্যাম্বুশে পড়ে। পরে ত্রিমুখী যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনী পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত হয়।  

পাকিস্তান বাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইটের আওতায় ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় যশোর থেকে পাকবাহিনী এসে কুষ্টিয়া দখল করে নেয় এবং এক নাগাড়ে ৩০ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করে সশস্ত্র অবস্থায় কুষ্টিয়া শহরে টহল দিতে থাকে। সেই সান্ধ্য আইন ভেঙ্গে মুক্তিকামী মানুষ বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। তৈরি করে বেরিকেড। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ ইট-পাটকেল, কাটা গাছের গুড়ি, ঘরের চাল নিয়ে এসে সেনাবাহিনীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। সেনাবাহিনী সেগুলো সরিয়ে মারমুখী হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ।

যে যুদ্ধে ৪ ডিসেম্বর খোকসা, ৭ ডিসেম্বর মিরপুরের আমলাসদরপুর, ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা, ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী এবং ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের পাঁচ দিন আগেই শত্রুমুক্ত হয় এই জনপদ।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলাযুদ্ধসহ ২১টি যুদ্ধ শেষে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া দখলে নিতে আসছিল। ঠিক তখন ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস বিমান চত্বরে মেইনরোডের ওপর পাক বাহিনীর অ্যাম্বুশে পড়ে তারা। শুরু হয় ত্রিমুখী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এখানে মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহিদ হন। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সমস্ত এলাকা শত্রু মুক্ত হয়।

এদিকে, ১৮ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত কহিনূর ভিলায় কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এখানে শিশুসহ হত্যা করা হয় মোট ১৬ জনকে।

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮ নং সেক্টরের অধীন ছিলো। লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী ৮নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ২২টি ছোটবড় যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া মুক্ত হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার কবি, ছাত্র, সাহিত্যিক, শিল্পী, লেখকদের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

কুষ্টিয়াতে ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জোনাল কাউন্সিলের সেক্রেটারি এম শামসুল হককে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।