ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেড়মাস কবর পাহারা, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মরদেহ উত্তোলন 

ডিস্টিক্টকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
দেড়মাস কবর পাহারা, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মরদেহ উত্তোলন 

শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী লিটন মিয়া হিটলারের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করেছে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট।

মরদেহ চুরির ভয়ে মামলার দেড়মাস পর্যন্ত কবরস্থান পাহাড়া দেন স্বজনরা।

 

পুলিশ ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গত ২ অক্টোবর রাতে লিটন মিয়া হিটলারকে ডেকে নিয়ে যায় শহিদুল ইসলাম শুভ ও তার সহযোগীরা। এর পরদিন সকালে স্থানীয় মসজিদের সামনে পাওয়া যায় হিটলারের মরদেহ। পরে অভিযুক্ত আসামিরাই হিটলারের স্ট্রোকে করে মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তড়িঘড়ি করে মরদেহ দাফন করে। পরবর্তীতে খবর পাওয়া যায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে শহিদুল ইসলাম শুভ ও তার সহযোগীরা হিটলারকে হত্যা করে মসজিদের সামনে ফেলে রাখে।

এরপর হিটলারের ভাতিজা আবির ইসলাম শহিদুল ইসলাম শুভসহ ৭ জনকে আসামি করে গত ৩০ অক্টোবর আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে শেরপুর সদর থানা পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলা করার পর থেকেই হিটলারের মরদেহ চুরি হয়ে যেতে পারে এমন ভয়ে গত দেড়মাস ধরে হিটলারের স্বজনরা পাহারা দেন কবরস্থান।

পরে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত হিটলারের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার সময় কবর থেকে হিটলারের লাশ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় এলাকার হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করে প্রাপ্ত রিপোর্টের আলোকেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান পুলিশ।

হিটলার তিন কন্যা সন্তান রেখে মারা যান। স্ত্রী তাছলিমা বেগম অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন সন্তানদের নিয়ে। আর ছোট মেয়ে ফারজিনা আক্তার এখনো বাবা ফিরে আসবে এমন আশায় কবরস্থানে গিয়ে বসে থাকে প্রতিদিন। তাই স্বজনদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।

এ ব্যাপারে স্ত্রী তাছলিমা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে আসামিরা মেরে ফেলেছে। আমাদের মামলা করতে দেয়নি। পরে ভয়ভীতি দেখায় আমরা যাতে মামলা না করি। মামলার বাদী ও মৃতের বড় ভাইয়ের ছেলে আবির ইসলাম বলেন, আমার চাচাকে জমি নিয়ে বিরোধের কারণেই শুভ, মতিনরা ডেকে নিয়ে খুন করে মসজিদের সামনে ফেলে রেখেছিল। আবার তারাই বলছিলো, চাচা স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমরা ঢাকা থাকি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানতে পারি তারা আমার চাচাকে খুন করেছে, তাই আমরা মামলা করেছি। মামলার পর থেকেই তারা আমার চাচার মরদেহ চুরি করবে, এমন হুমকি দেওয়ায়, আমরা আমার চাচার কবর পাহারা দিয়েছি। আমি আমার চাচার হত্যাকারীদের বিচার চাই।

প্রতিবেশী  রফিকুল ইসলাম বলেন, নিরীহ লোকটাকে এভাবে মারলো। আমরা এর বিচার চাই।

শেরপুর সদর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকতা (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশে মরদেহ কবর থেকে তুলেছি। ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশে সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।