ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার বন্ধে কমিটি হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক ব্যবহার বন্ধে কমিটি হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।  

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন শৃঙ্খলা’ সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির ষষ্ঠ সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা অনেক আগে থেকেই তা দেখে আসছি। সেটিকে নিরুৎসাহিত করতে আমরা একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। শিগগিরই একটি সমাধান বের করা হবে। রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন এবং আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, কমিটি সেই ব্যবস্থা করবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আমাদের নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারে, তার ব্যবস্থা করার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও টহল রাস্তা নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে। আপনারা জানেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চতুর্দিকে কাঁটাতারের বেষ্টনী, টহল রাস্তা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এরইমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ করে দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ৯৯ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। তারা আমাদের এপিবিএনের কাছে পর্যায়ক্রমে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। শুধু নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো তৈরি বাকি রয়েছে। বাকি সব কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও বিকাশ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাদের দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষ করে তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে কিংবা তাদের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থার জন্য যা যা করা দরকার, তা নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন এনজিও, সরকার, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই কাজ করছে। আজ আমরা যে রিপোর্ট দেখতে পেলাম, ৬৫ শতাংশ রোহিঙ্গাকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এটি আরও ভালো জায়গায় অর্থাৎ আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতার বোনের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত: জানতো না মন্ত্রণালয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাইরে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে কিছু কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তা নজরদারিতে আনা হচ্ছে। আমাদের এপিবিএনও কাজ করছে।  

ভাসানচরে স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর দাবির প্রসঙ্গ টনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমাদের ভাসানচরে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা লোকজন গেছেন। এনজিও, পুলিশও সেখানে গেছে। সেখানে একটি ভালো হাসপাতাল হওয়া দরকার। আজ বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে কাজ করে খেতে পারে, সেজন্য সেখানে (ভাসানচর) বিভিন্ন এনজিও সক্রিয় রয়েছে। তাদের আমরা আরও সহযোগিতা করবো। তারা (রোহিঙ্গারা) যাতে সেখানে কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে পারে, সেজন্য ছোটো ছোটো লেক করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক কাজ করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ব্যবহারিকভাবে মৎস্য ও কৃষি উৎপাদনে দক্ষ করে তুলতে ব্র্যাক কাজ করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সামনে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না-ঘটে, সে জন্য সেনাবাহিনী থেকে প্রশাসন সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসনে আমরা কাজ করছি। ক্যাম্পের পাশে থাকা বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ভালোভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে, যাতে অপরাধ হ্রাসের পাশাপাশি মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনা করেছি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন, বন্ধু দেশগুলোও কাজ করছে। আমাদের আশা, শিগগিরই এর সমাধান হবে।

যুক্তরাষ্ট্র কী পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে নিতে চায়- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, নিজেদের ভিসা দিয়েই বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের নিচ্ছে। বছর তিনেক আগে আমার সঙ্গে জাতিসংঘে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি তখন রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছিলেন। আজ জানতে পারলাম তিনি মাত্র সাতজন নিয়েছেন। আর অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে ২৪। এটি সংখ্যায় খুবই কম। এ নিয়ে কথা বলে সবার মনোযোগ টানতে চাই না।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতের নেতার বৈঠক হয়েছে। সেখানে হেফাজতের দাবি-দাওয়াগুলো কী ছিল- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দাবি-দাওয়া তো আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। তাদের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জানিয়েছেন, তাদের দাবি-দাওয়া যেগুলো যৌক্তিক, সেগুলো তিনি অবশ্যই দেখবেন, সেগুলো করে দেবেন। আর যেগুলো একটু সময় লাগবে, সেগুলো তিনি নজরে আনবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
জিসিজি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।