ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিজয়ের ৩ দিন পর হানাদার মুক্ত হয় ঈশ্বরদী

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
বিজয়ের ৩ দিন পর হানাদার মুক্ত হয় ঈশ্বরদী

পাবনা (ঈশ্বরদী):  ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে যখন বাংলাদেশের মানুষ বিজয় উল্লাসে আনন্দে মাতোয়ারা, তখনও পাক-হানাদার মুক্ত হয়নি ঈশ্বরদী। সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীদের বিরুদ্ধে তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের।

৩৩ জন বীর-মুক্তিমুক্তিযোদ্ধা আত্মত্যাগের বিনিময়ে সশ্রস্ত্র প্রতিরোধের পর ১৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী হানাদার মুক্ত হয়।  বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে আনন্দে মেতে উঠেন সাধারণ মানুষ।  

১৬ ডিসেম্বরের পরও ঈশ্বরদীতে যুদ্ধ অব্যাহত থাকার কারণ, সেখানে শহরের অবাঙালি অধ্যুষিত একটি এলাকা, ফতেহমোহাম্মদপুর লোকোসেড এলাকাজুড়ে অবাঙালিদের সঙ্গে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার আত্মগোপনে ছিল।  

২১ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ঈশ্বরদী সাত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। এই এলাকায় সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান।

ইতিহাস বলছে, ১৯ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চল থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হয়ে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী এসে ঘাঁটি গাড়ে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপর হানাদাররা ভয়ে ঈশ্বরদী বাংলাদেশ সুগারক্রপ ইনিস্টিটিউট মাঠে জড়ো হতে থাকে।  

এ খবরে ৪০০ বীর-মুক্তিযোদ্ধা এলাকাটিকে ঘিরে ফেলেন। তখন বাইরের থেকে বীর-মুক্তিযোদ্ধারা বারবার তাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছিল। এসময় বীর-মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দুইদিন সময় চেয়ে নেন তারা।  

অবশেষে ৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর আহমেদ ঈশ্বরদীতে আসেন। এরপর মিত্র-বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিংয়ের উপস্থিততে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন পাকসেনারা।  

আত্মসমর্পণের পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর আহমেদ তার রিভলভার রাখার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। সবকিছু সমাপ্তির পর ঈশ্বরদীতে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে আনন্দে মেতে উঠে সাধারণ মানুষ।

ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর-মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদূল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায়,অবাঙালি, রাজাকার পাকিস্তানি সেনাদের হাতের নিহত হয়েছেন বহু মানুষ। ঈশ্বরদীতে অরক্ষিত ১০টি গণকবর অরক্ষিতই রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গণকবরগুলো সংরক্ষণের  উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হলে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটি জানবে।  

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর-মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস জানান, ঈশ্বরদীতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও গণকবরগুলো অরক্ষিত রয়েছে। আমি সংসদে দাবি জানাব, যেন বাস্তবায়ন হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।