ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বীরাঙ্গনা গনমালা তঞ্চঙ্গ্যা

‘শান্তির বাংলাদেশ দেখতে চাই’ 

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
‘শান্তির বাংলাদেশ দেখতে চাই’ 

রাঙামাটি: বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ হচ্ছে- সাহসী নারী বা বীর নারী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে যুদ্ধ জয়ের গল্পে যাদের নায়িকা খেতাব দেয়া হয়েছে।

 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতার লক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ করে। এর ফলে অগণিত যুদ্ধশিশুর জন্ম হয় ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সমাজচ্যুত করা হয়। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই মহান স্বাধীনতা, তাদের সম্মান দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেতাব দেন বীরাঙ্গনা।

এমনই এক বীরাঙ্গনা গনমালা তঞ্চঙ্গ্যা। বয়স প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই। পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার দুর্গম গাইন্দ্যা ইউনিয়নের তাইতং যৌথ খামার এলাকায়। জাতির পিতার কন্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেয়ে স্বামীর সঙ্গে সুখেই দিন কাটছে তার।

যদিও বার্ধক্য গ্রাস করে নিয়েছে তার শরীর। কানে শোনেন না দীর্ঘ বছর। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন স্বামীকে নিয়েই সংসার জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি।  

লেখাপড়া না জানার কারণে নিজ মাতৃভাষা ছাড়া বাংলা একেবারেই বোঝেন না। তাইতো ভাতিজা ও স্বজনদের সাহায্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। তার অভিব্যক্তিগুলো এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।

বীরাঙ্গনা গনমালা তঞ্চঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিজ গ্রাম তাইতং যৌথ খামার এলাকায় মা-বাবা এবং ভাই-বোন নিয়ে বসবাস করতেন।

যুদ্ধের সময় একদিন দুপুরে ওই এলাকার পাহাড়ে গরু চরানোর সময় পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন সদস্য তার সম্ভ্রমহানী ঘটায়। এরপর তারা চলে গেলে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাবা-ভাই মিলে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই সময়ে স্থানীয়রা নানা অপবাদ-কটুক্তি করলেও পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় কঠিন দিনগুলো অতিবাহিত করতে পেরেছেন গনমালা।

বীরাঙ্গনা এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে যখন বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়েছেন,  তখন এসব খেতাব বুঝতাম না, লেখাপড়া না জানা থাকায়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যখন আমাকে মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দেন, তখন পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি আমাকে জানায়। কানে না শোনায় তাদের কথা বুঝতে কষ্ট হয়। এরপর যখন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেয়েছি, তখনই বুঝলাম সরকার আমাকে অনেক ভালোবাসে। ভাতা পাওয়ার পর থেকে স্বামী নিয়ে সুখে আছি। এইজন্য শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।  

এসময় তিনি ‘শান্তির বাংলাদেশ’ দেখতে চান বলেও জানান।

বীরাঙ্গনা গনমালা তঞ্চঙ্গ্যার স্বামী ভাগ্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, আমি যেদিন গনমালাকে বিয়ে করেছি, সেইদিন থেকে আমার স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় মানুষ নানা ধরণের কথা বলতো। কিন্তু আমি তাদের কথা কানে তুলিনি। আমার স্ত্রীকেও সান্ত্বনা দিয়েছি। সরকার যখন আমার স্ত্রীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন থেকে আমার আনন্দের শেষ নেই।

বীরাঙ্গনা গনমালা তঞ্চঙ্গ্যার ছোট ভাই স্থানীয় কারবারি প্রিয় রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, সরকার আমার বড় বোনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে। এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে। আমার বোন সুখে-শান্তিতে আছে। আমার বোনের পরিচয় দিতে আমাদের গর্ব লাগে।

বীরাঙ্গনা গনমালা তঞ্চঙ্গ্যার ভাইয়ের ছেলে কার্তিক চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, শেখ হাসিনা আমার ফুফুকে বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দেয়ার পর থেকে আমরা বুক ফুলিয়ে চলি। আমার ফুফু অনেক দুঃখে-কষ্টে দিন পার করেছেন। এখন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাওয়ায় অনেক সুখে দিন কাটছে। এইজন্য শেখ হাসিনা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।