ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইউএনও পরিচয়ে ইমামের কাছে টাকা দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
ইউএনও পরিচয়ে ইমামের কাছে টাকা দাবি

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ইউএনও’র পরিচয়ে ল্যাপটপ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মসজিদের এক ইমামের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল হক নামের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।  

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।

 

অন্যদিকে, ভুয়া ইউএনও’র পরিচয়ে বিভিন্ন মহলে টাকা চাওয়ার ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর (সোমবার) রাতে ইউএনও ভাঙ্গা নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রতারকদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতামুলক একটি পোস্ট করা হয়। যা ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এতে চলছে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জনসহ সমালোচনার ঝড়।

অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের একাধিক ঘটনা ভাঙ্গা থানা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করার পরও রহস্যজনক কারণে তেমন কোনো ফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

নাসিরাবাদ ইউনিয়নের চরদুয়াইর জামে মসজিদে ইমামতি করেন ইমাম মো. আমিনুর।  

তার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় নাসিরাবাদের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল হক হাওলাদার তার কাছে এসে বলেন, ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আজিম উদ্দিন তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলবেন। আমিনুর জানান, তিনি নামাজের পর ইউএনওর সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু আব্দুল হক এতে রাগান্বিত হয়ে তাকে ধমক দেন এবং বলেন, স্যার বসে আছেন। একপর্যায়ে, আব্দুল হকের দেওয়া একটি ফোন নম্বরে আমিনুর কথা বলেন। তখন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তাকে জানানো হয়, তার নামে একটি ল্যাপটপ বরাদ্ধ হয়েছে। সে বাবদ তাকে কিছু খরচ পাঠাতে হবে বলে আমিনুরকে একটি বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়।

কিন্তু আমিনুর তাতে রাজি না হয়ে তাকে জানান, মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ভাঙ্গা ইউএনও অফিসে গিয়ে টাকা দেবেন। তখন ফোনের ওই ব্যক্তি তাকে গালমন্দসহ অপমানজনক ভাষা ব্যক্ত করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি মসজিদ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

কয়েকজন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি ভাঙ্গা থানার ওসির ফেসবুক আইডি হ্যাক করারও চেষ্টা করা হয়।  

গত সোমবার থেকে উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে ভাঙ্গার ইউএনও’র পরিচয় দিয়ে নানা অযুহাতে টাকা দাবি করছেন একটি প্রতারকচক্র। চক্রটি ও তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান উপজেলার বাসিন্দারা।  

ভুক্তভোগী স্কুলের এক প্রধান শিক্ষক ও ব্যবসায়ী রাজু মোল্লাসহ কয়েকজন জানায়, কয়েকদিন আগে গভীর রাতে ফোনে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তাদের কল করা হয়। এসময় নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের একাধিক ঘটনা ভাঙ্গা থানা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করার পরও রহস্যজনক কারণে তেমন কোন ফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

এ ঘটনার বিষয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হক হাওলাদার জানান, তিনি নিজেও প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন। ঘটনাটি প্রতারকদের একটি ফাঁদ ছিল। সে বিষয়টি তিনি পরে বুঝতে পেরেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, আমিনুর নামের একজন মসজিদের ইমামের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়া এক প্রধান শিক্ষকের কাছেও ইউএনও’র নাম ভাঙিয়ে প্রতারকরা অর্থের দাবি করে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গা ইউএনও পরিচয়ে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা চাওয়া হয়নি। এটা একটি প্রতারক চক্রের কাজ।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তার ফেসবুক আইডিও হ্যাক করার চেষ্টা করেছিলো একটি চক্র। কিন্তু তারা পারেনি।  

ইউএনও'র মোবাইল নম্বর ক্লোনের বিষয়ে তিনি বলেন,  এব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।