নাটোর: উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় নাটোরে জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের কনকনে শীতে মানুষসহ গবাদি পশুরাও রীতিমত কাবু হয়ে পড়েছে।
এদিকে চলনবিল ও হালতিবিলে শুরু হয়েছে বোরোর চারা রোপনের কাজ। কিন্ত হাড় কাঁপানো শীতের কারণে শ্রমিকরা মাঠে কাজ করতে পারছেন না। অলস বসে বসে সময় কাটাচ্ছেন তারা।
এছাড়া শীতকালীন পেঁয়াজের চারা রোপনের জন্য মিলছে না শ্রমিক। ফলে চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শীতের শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে পড়েছেন শহর ও গ্রামাঞ্চলের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বুধবার (৪ জানুয়ারী) দুপুর ১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের চেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে। ঘন কুয়াশার কারণে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে একটু উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন ছিন্নমূল লোকজন। গবাদি পশুগুলোকে চট-ছালা কিংবা পুরানো কাপড় পড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
নাটোর শহুরের অটোরিকশা চালক সালাম, শহিদুল, মানিকসহ আরও অনেকে জানান, খুব সকালে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। কিন্তু যাত্রীদের আনাগোনা তেমন নেই। দুপুর পর্যন্ত ভাড়া পেয়েছেন মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টাকা। অথচ অন্যদিন এই সময়ে ভাড়া হতো কমপক্ষে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। নিত্য পণ্য কেনা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শুধুমাত্র অফিসগামী মানুষকে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। একই অভিব্যক্তি অন্য পেশার মানুষসহ আরও অনেকের।
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে জানান, বুধবার জেলায় দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ র্তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আরও দুয়েকদিন এমন তাপমাত্রা থাকতে পারে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বোরো বীজতলা ও আলুর কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে সেটা যাতে না হয় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং কৃষি বিভাগ তৎপর আছে।
তিনি জানান, কুয়াশা গম ও ভুট্টা ফসলের জন্য উপকারী। কেননা এতে করে রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। শীতের কারণে কৃষকরা বোরো রোপনে কিছুটা সমস্যায় ভুগছেন। কারণ শ্রমিকরা মাঠে নামতে চাচ্ছেন না। তবে এ সমস্যা সাময়িক।
নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় বাংলানিউজকে জানান, শীতের কারণে সাধারণত শিশুদের নিউমোনিয়া, বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোর সদর হাসপাতালে ২৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শিশু ও বয়োজৈষ্ঠসহ ৩৫ জন, নিউমোনিয়া-সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত শিশু ৪৫ জন, নারী ৬১ জন ও পুরুষ রোগী ৬৪ জন রয়েছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৩
এমএমজেড