ঢাকা: থানায় আসা বিপন্ন মানুষকে সেবা প্রদানে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বুধবার (০৪ জানুয়ারি) বঙ্গভবনে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩’ উপলক্ষে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জনগণের আইনি সহায়তা পাওয়ার প্রাথমিক কেন্দ্র হলো ‘পুলিশ থানা’। থানায় আসা বিপন্ন মানুষকে তাদের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানে আপনাদেরকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। ’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘থানায় এসে কোনো ব্যক্তি যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, জনগণকে সেবা প্রদান করা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। ’
এরইসঙ্গে মাদক ও কিশোরগ্যাং বন্ধে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘মাদকের বিস্তার দেশের জন্য এক বড় সমস্যা। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশকে জিরো টলারেন্স নীতিতে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ’
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইদানীং দেখা যাচ্ছে, উঠতি বয়সের শিশু-কিশোররা নানা ধরনের অপরাধ ঘটাচ্ছে। অনেক সময় তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর ‘গ্যাং’ নামে সংগঠিত হয়ে জঘন্য অপরাধ করছে। কিশোর অপরাধ দমনেও বাংলাদেশ পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। আমি পিতা-মাতা, অভিভাবক ও পরিবারকেও এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ করছি। ’
পুলিশকে আরও সর্তক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমি আশা করি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ আরো সজাগ ও সতর্ক থাকবে। ’
জনগণের আস্থা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডে ইত্যাদি জনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আপনাদের জন্য অনেক সহজ হবে বলে আমি মনে করি। ’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে থানায় নারী ও শিশু, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ইত্যাদি ডেস্ক স্থাপনের পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে মানুষকে দ্রুত সেবা প্রদান সহজতর হয়েছে। অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, অনলাইন জিডি, ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন ইত্যাদি অনলাইন সেবা এবং বিডি পুলিশ হেল্প লাইন, হ্যালো সিটি, রিপোর্ট টু র্যাব, হ্যালো এসবি ইত্যাদি অ্যাপসের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সেবা জনগণের কাছে সহজলভ্য করা হয়েছে। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরো বাড়াতে এ ধরণের আরও প্রযুক্তিনির্ভর জনমুখী সেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ’
সাইবার অপরাধ দমনে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ পুলিশকে এগিয়ে থাকতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি সংযোজন ও ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ দমনে উদ্যোগী হতে হবে। ’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এমইউএম/এসএএইচ