ফরিদপুর: মধুখালী উপজেলার কোরকদি ইউনিয়নের বামুন্দি-বালিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. ইয়াসিন মোল্লা ওরফে সবুর মোল্লা (৫০)। সম্প্রতি জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাতিজাদের হামলার শিকার হন তিনি।
হামলার ঘটনাটি জেনে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সবুর মোল্লার সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি কথাগুলো বলার পাশাপাশি প্রশ্ন করেন, গরীব বলে তিনি কি বিচার পাবেন না? এদেশে কি তার মতো গরিব মানুষের কোনো মূল্য নেই?
তিনি জানান, মেরে হাসপাতালে পাঠানোর পর এখন আসামিরা উল্টো তাকে জড়িয়ে মামলা করছে। তাই আসামিদের ভয়ে তিনি বাড়ি যেতে পারছেন না।
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলার আশঙ্কায় মধুখালী থানায় ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন সবুর মোল্লা। কিন্তু রক্ষা পাননি। ভাতিজাদের হামলার শিকার হন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বাংলানিউজকে তিনি জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর এ ঘটনায় তিনি মামলা করেন। এতে তার ভাতিজারা গ্রেফতার হন। পরে তারা জামিনে ছাড়া পান। হাসপাতালে থাকলেও তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার পরিবারের লোকজনকেও নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি ও গালিগালাজ করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপটও জানান ভুক্তভোগী। বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর বামুন্দি-বালিয়াকান্দি গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের মধ্যেই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে মো. ইয়াসিন মোল্লা ওরফে সবুর মোল্লার ওপর হামলা করে তার চাচাতো ভাই মৃত সরোয়ার মোল্লার ছেলে হাসান মোল্লা, হোসেন মোল্লা, মফিজুর মোল্লা ও শরীফুল মোল্লা। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ইয়াসিন মোল্লার মাথায় আঘাত করা হয়। আগের দিন তিনি হামলার আশঙ্কায় মধুখালী থানায় নিরাপত্তার জন্য জিডি করেছিলেন।
তিনি জানান, ছোট অবস্থায় তার বাবা মারা যান। তারপর থেকে তাদের জমিজমা হাসান মোল্লার বাবা সরোয়ার মোল্লা দেখাশোনা করতেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে সবুর বা তার পরিবারকে তাদের জমি বুঝিয়ে দিতে পারেননি। তাই এখন তার ছেলেরা জমিজমা ভোগদখল করে রেখেছে। তিনি জমির মালিকানার কাগজ দেখাতে চাইলেও চাচাতো ভাইয়ের ছেলেরা তা দেখতে চাইতেন না।
এরপর থেকে সবুর ও তার পরিবারকে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন সরোয়ার মোল্লার ছেলে হাসান মোল্লা, হোসেন মোল্লা, মফিজুর মোল্লা ও শরীফুল মোল্লা। ২৮ ডিসেম্বর সবুরের ভাতিজারা তার জমি থেকে গাছ কেটে নিতে শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে ভাতিজারাসহ ১০-১২ জন ধারালো কুড়াল ও দা নিয়ে তার ওপর হামলা করে। এ সময় তিনি মাথায় কুড়ালের আঘাত পান।
এসব ঘটনা নিয়ে সবুরের ভাতিজা মফিজুরের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পারিবারিক বিষয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা আছে। কিন্তু গাছ কাটা হয়েছে দুজনেরেই সীমানা থেকে। এ ঘটনায় মামলা হয়, এখন তারা জামিনে আছেন। তিনি বলেন, আমার চাচা কখনো জমিজমার কথা বলেনি বা আগে আমাদের কাগজ দেখাতে চাননি। হঠাৎ লোকজন নিয়ে এসে কিছু কাগজ দেখাতে চাইলো। আমাদের সমাজে একটা মান-সম্মান আছে। হয়তো গরিবের মান সম্মান কম।
সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত করেন মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, মারামারির ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। এতে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। যারা আসামি ছিলেন জামিনে মুক্ত আছেন। নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
এমজে