ঢাকা: বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের উদ্যোগে ও সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দিনব্যাপী চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনব্যাপী এ মেলায় ৫৪টি আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে দিনব্যাপী এ চাকরি মেলা উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। মেলায় সারাদেশ থেকে প্রায় ৪৫০ জন চাকরি প্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অংশ নেন।
জানা যায়, এ চাকরি মেলা উপলক্ষে অনলাইনে সারাদেশ থেকে পাঁচ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সিভি জমা দেন। এছাড়া মেলায় সরাসরি উপস্থিত হয়ে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীরা সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পান। এদের মধ্যে যাদের তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা রয়েছে তাদের নিয়োগের লক্ষ্যে সাক্ষাৎকার নেয় মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।
ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, কল সেন্টার এজেন্ট, প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন পদের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে।
বিভিন্ন ট্রেডবডি বা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় অংশগ্রহণ করে। মেলায় অংশগ্রহণকারী চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), সাইবার ক্যাফে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ আইসিটি শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও ব্যুরোর তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধিতা কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো।
আশা করা হচ্ছে এ মেলা থেকে ৪০ থেকে ৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এ মেলা থেকে ১৫০-২০০ জন চাকরিপ্রার্থীকে পরে নিয়োগের লক্ষ্যে সাক্ষাৎকারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গত আট বছর ধরে এ চাকরি মেলার আয়োজন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সক্ষম, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।
আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পে একজন উদ্ভাবক টকিং হোয়াইট স্টিক আবিষ্কার করেছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, এই সাদা ছড়ি দিয়ে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে স্পর্শ বা ধাক্কা খাওয়ার আগেই টকিং হোয়াইট স্টিক কথা বলে সতর্ক করে দেয়। তিনি এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসেসটিব টেকনোলজি উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি বিভাগ থেকে হুইল চেয়ার দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বাচ্ছন্দে চলতে দেশে স্বল্প খরচে উচ্চ প্রযুক্তি সম্বলিত হুইল চেয়ার তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আইসিটি বিভাগের স্টাটআপ প্রকল্প, স্টাটআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পুঁজি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষম ভাই-বোনদের মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা সিডমানি হিসেবে পুঁজি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাই-বোনেরা জব সিকার না হয়ে জব ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক শেখ মো. মনিরুজ্জামান, সিএসআইডি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, মাই আউটসোর্সিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিবুল বাশার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস